শেখ লিটন:
চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার তোড়জোড়। তবে এবার কপালে চিন্তার ভাজ রেখেই আমন ধান ঘরে তুলছে কৃষকরা। ধানে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণে ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে কৃষকদের যত্নে ফলানো ধান। এতে এক বিঘা জমিতে ধান চার মণও ধান হচ্ছে না- বলছেন কৃষকরা। তবে জেলার কৃষি বিভাগ এ কথা অস্বীকার করে পোকা দমনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা গেছে, এবার এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ১২-১৪ হাজার টাকা। বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর কৃষকের খরচ আরও বেড়ে গেছে। বিঘাপ্রতি ১৬-১৮ মণ ধান হলে কৃষকের কিছুটা লাভ থাকার কথা। পোকার আক্রমণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের লাভের আশা একেবারেই নেই। পোকার আক্রমণের কারণে এ বছর বেশিরভাগ কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গায় আমন ধানে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ ও রোগবালাইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ধান চাষ করা বেশিরভাগ কৃষক পড়েছেন লোকসানের মুখে। অনেক কৃষক ইতিমধ্যেই তাদের ধান চাষের পাট চুকিয়ে অন্য ফসলের চাষ করেছেন। কারও কারও ধানক্ষেতে ৩-৪ মণের বেশি ধান পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
কৃষকরা জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতে ধানক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এরপর কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই ধানক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ধানক্ষেত বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রতিষেধক দিয়েও কৃষক তাদের ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি। কারেন্ট পোকার আক্রমণে রাতারাতি অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ জিকু বলেন, ‘১৬ কাঠা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলাম। মাত্র দেড় মণ ধান হয়েছে। যা খরচ হয়েছে তা ঘরে ফিরে আসেনি। বিচালিও ভালো হয়নি। যা আছে তা গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
অপর কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার আমন ধানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। একদিকে কৃষি উপকরণের দাম বেশি। অপরদিকে বিভিন্ন পোকার আক্রমণে ধানের ফলন তো দূরের কথা। কিছুই নেই ধানে। মাঠ থেকে বিচালি নিয়ে যাচ্ছি। এবার আমন ধান চাষ করে মাথাই হাত। সব মিলিয়ে এবার আমন ধান চাষে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি।
তবে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেছেন, আমরা কৃষকদের পাশে ছিলাম, থাকবো। সব ধরনের পরামর্শ দিয়েছি। কাঙ্খিত ধানের উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে না। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে আগামিতে আমন ধানে কোনো পোকার আক্রমণ না হয়। আশা করি ধানের দাম এবার ভালো হবে। তাই ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে আগামিতে।