নিজস্ব প্রতিবেদক:
তফসিল ঘোষণা করা হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। অর্থাৎ বেজে গেছে নির্বাচনী ট্রেনের হুঁইসেল। ইতোমধ্যে প্ল্যাটফরমে প্রস্তুত থাকা ইসির ট্রেন এবার ছুটতে শুরু করেছে। এ ট্রেনের অন্যতম যাত্রী আওয়ামী লীগও প্রস্তুত। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচনী যাত্রা। আজ তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে বসবেন শেখ হাসিনা। সেখানেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই ট্রেনে আওয়ামী লীগের সহযাত্রী হতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টির একাংশ, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফসহ কিছু দল। অন্যদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলো আদৌ এই ট্রেনের যাত্রী হবে কিনা- তা এখনো অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় সহযাত্রী বাড়াতে কৌশলী আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি, বামজোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে। এতে নির্বাচনের যাত্রাপথ বিঘ্নিত হবে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। পাশাপাশি অপশক্তির নাশকতা মোকাবিলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত প্রস্তুত থাকবে। এবং আমাদের বিশ^াস দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ পেশাদারিত্বের সঙ্গে করবেন। ইসি ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ থেকে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বিকাল ৩টায় তেজগাঁওস্থ আওয়ামী লীগের অফিসে আসবেন শেখ হাসিনা। সেখানে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক করবেন। বৈঠকের পর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সব সদস্যের নাম ঘোষণা করা হবে। এর আগে গত ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সভাপতি শেখ হাসিনা। সদস্য সচিব করা হয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। সেই সভাতেই কমিটির অন্যান্য সদস্য নির্বাচন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। এসব তথ্য জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বৈঠক শেষে তেজগাঁও থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর আগামীকাল থেকে দলীয় ফরম বিক্রি শুরু হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। দলের তরফে বলা হয়েছে, অনলাইনেও ফরম বিক্রি চলবে। মনোনয়ন ফরমের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আগে এটি ছিল ৩০ হাজার টাকা। এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ইসি-ঘোষিত তফসিলকে বর্জন করা প্রসঙ্গে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সব দলকে আহ্বান জানাই নির্বাচনে আসার জন্য। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ^াস করে; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিশ^াস করে। তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্রের পথ বেয়ে কখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি, আসবেও না। জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের কৌশল কী হবে, আর না এলেই বা কী হবে- তাও নির্ধারণ করে রেখেছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে এলে ১৪ দলের বাইরেও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে ক্ষমতাসীন দল। তবে এবার দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী জোট বা মহাজোটে যাবে না আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি কিছু আসন উন্মুক্ত (স্বতন্ত্র প্রার্থী) রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেরও একটি নির্দেশনা আছে। একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনী জোট গঠন করলে, এ জোটের যে কোনো একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলসমূহের প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এ রূপ প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জোট-মহাজোট করতে হলে আজ/কালের মধ্যেই করতে হবে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ১৪ দলের হয়েই নির্বাচন করবে। তবে অদৃশ্য মহাজোট থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে- হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।’
চলছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ:
আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের বাসায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। হাতে হাতে সিভি পৌঁছে দেওয়া, কুশলবিনিময়, নিজ মুখে নিজের ক্যারিয়ার তুলে ধরা- যোগ্য প্রমাণ করতে চলছে তাদের যারপরনাই চেষ্টা। এ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি কাদা ছোড়াছুড়িও চলছে কমবেশি। কেউ কেউ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং নিজ এলাকায় ব্যাপক শোডাউনও করছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ভাষ্য- মনোনয়ন পেলেই নির্বাচিত নন। এবার সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে আসতে হবে। যাদের আমলনামা ভালো, তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তবে কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীও দেওয়া হতে পারে। এর আগে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, শত ফুল ফুটবে। সবচেয়ে সুন্দর ফুলটিকে তিনি বেছে নেবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী আমাদের সময়কে জানান, আওয়ামী লীগ অনেক পুরো একটা দল। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের রীতিই অনুসরণ করা হয়। নতুন করে ভাববার কিছু নেই। সৎ, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবেন এমন ইঙ্গিত করেন তিনি।