নিজস্ব প্রতিবেদক:
নতুন সরকার গঠনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইইউর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পালোনির নেতৃত্বাধীন ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র, শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দল জানায়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন সরকার গঠন হবে। এ বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে বলেছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা আছে। তফসিল ঘোষণা হবে এবং তারপরে আমরা আশা করছি, সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। মানবাধিকারের যে সাধারণ বিষয়গুলো আছে- যেমন সমাবেশ করার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এ ধরনের যেসব বিষয় আছে সেগুলো ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ে (ইউপিআর) আলোচনা হয়েছে। সে আলোকে আমরা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউর প্রতিনিধিরা বলেছেন, শতকরা ৫৬ ভাগ যে মজুরি ঘোষণা এসেছে এটার সঙ্গে সবাই একমত নন। তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা আশা করছেন, বর্তমানে শ্রম খাতে যে অবস্থা বিরাজ করছে, সেটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশের নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রমিকদের আন্দোলনের সম্পর্ক নেই জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, চার-পাঁচ বছর পর শ্রমিকরা এ রকম আন্দোলন করে। এটার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। আর টাইমিংটা একেবারে কাকতালীয়। ইইউর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের শ্রম খাতের বেশ কিছু ইস্যুতে প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, ইইউর প্রতিনিধি দল আমাদের বেশ কিছু অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশুশ্রম, কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিক ইউনিয়ন আরো সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া আমরা শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতি তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, সমাবেশ, সমিতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বেআইনি আটকের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে ইইউ আমাদের সঙ্গে এখন থেকে মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করতে চায়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইইউর সঙ্গে জিসপি প্লাস সুবিধা কীভাবে পেতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই সঙ্গে এলডিসি পরবর্তী সময় ইউরোপের বাজারে আমাদের জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। জিএসপি প্লাসের যে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে, তারা আশা করছে এটা সহায়ক হবে। এটা হলে আমাদের পূর্ণ আলোচনার সুযোগ থাকবে। আগামী বছরের মার্চে ইইউর প্রতিনিধি দল আবার বাংলাদেশের শ্রম সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনার বার্তা দিয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, লেবার ইস্যুতে আমাদের ন্যাশনাল প্ল্যান অ্যাকশনের ৯টি টার্গেট নিয়ে তারা কথা বলেছেন। যেগুলোর প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। লেবার ল’ ডেপ্লয়মেন্ট নিয়ে তারা কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে আইএলও সন্তুষ্ট কিনা? আমরা বলেছি, আইএলওর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক হয়েছে। তাদের অনেক সাজেশন আমরা নিয়েছি। আবার অনেকগুলো নিতে পারিনি। লেবার ইস্যুতে তারা কিছু সাজেশন দিয়েছে। আমরা বলেছি, পরবর্তী সময় লেবার সংশোধনে এগুলো যুক্ত করার সুযোগ থাকবে। ইইউ বলেছে, তাদের সঙ্গে ক্লোজ রিলেশন রাখতে। জিএসপি প্লাস ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ সচিব তপন কান্তি বলেন, আমাদের রপ্তানির ৮৫ ভাগ গার্মেন্ট থেকে আসে। সুতরাং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরবর্তী সময় জিএসপি প্লাস থাকে একই সঙ্গে গার্মেন্টস সেক্টর যদি শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকে এটা তো অর্থহীন। আমরা বলেছি, এটা (তৈরি পোশাক) যুক্ত করতে হবে। গার্মেন্টস খাত সফল, এটাকে শাস্তি দেয়া যাবে না। এটাকে উৎসাহিত করতে হবে। তারা যেন সেভাবে রিপোর্ট দেয়। এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইইউ প্রতিনিধি দল জানায়, বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার উভয়ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলা প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং সুশীল সমাজের কার্যক্রম পরিচালনার সহায়ক পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিয়েছে ইইউ।