নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর গ্রামে কবরস্থান পাড়ায় সড়কের পাশেই পুকুর খননের নামে চলছে মাটি ও বালি কাটার হিড়িক। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার কাজ। কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই চলছে এই মাটি ও বালি বিক্রি। এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জিয়া’র বিরুদ্ধে। এর আগে সেখানে অভিযান চালিয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সদর উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু পুকুর খনন নয়, সেই সাথে ফসলি জমির টপ সয়েলও চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন বিল্ডিং ও অন্যান্য কাজে। এতে করে যেমন ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তেমনই সড়কের ক্ষতি হচ্ছে চরমভাবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, গত ৮-৯ দিন আগে কোটালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাইসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে ওই মাটি ভর্তি ট্রাক্টরের ধাক্কায় শোলমারি গ্রামের মেয়ে (স্কুল ছাত্রী) ছিটকে রাস্তার পাশে পড়ে যেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার বাইসাইকেলটি ভেঙ্গে যায়। আবার গ্রামের কবরস্থান পাড়া থেকে প্রায় ৭শ মিটার সোলিং রাস্তাটি মাটি ভর্তি ট্রাক্টর যাতায়াতের জন্য প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দিনে প্রায় ১শ’টির বেশি মাটি ভর্তি ট্রাক্টর যাতায়াত করে।
দিনে রাতের বিভিন্ন সময়ে গোপনে প্রকাশ্যে মাটি দস্যু জিয়া পুকুর খননের নামে পুকুরের মাটি-বালি সহ ৩ ফসলি জমির মাটি ট্রাক্টরযোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে চলেছে। কেউ কিছু বলতে গেলে সে বলে ‘আমার সবকিছু ম্যানেজ করা আছে। কোন সমস্যা হবে না।’ ইতোমধ্যে এলাকার পুরো রাস্তা একেবারে বালি-মাটিতে ভরে গেছে। যার ফলে যখন তখন ঘটতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। তবে গ্রামের ভিতরে এরকম বড় ধরনের মাটি দস্যুর ভয়াল থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত শত শত কৃষকসহ সাধারণ মানুষ।
একদিকে যেমন এলাকার মানুষের ক্ষতি করছে ঠিক তেমনই সরকারের নিয়মভঙ্গ করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেই সরকারি রাস্তাও নষ্ট করছে এই অসাধু মাটি ব্যবসায়ী সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গ্রিশনগর গ্রামের নায়েব আলির ছেলে জিয়া। সে বিভিন্ন স্থানে জমির মালিকের সাথে কন্ট্রাক্ট করে সেখান থেকে বালি ও মাটি কেটে বেআইনি ভাবে বিক্রি করে জেলার বিভিন্ন স্থানে। যার ফলে নিরীহ কৃষকদের ফসলি জমির চরম ক্ষতি সাধন হচ্ছে। মাটি দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।
ইতোমধ্যে ফুরশেদপুর গ্রামের সড়কটি ধুলা, বালি, কাঁদা, মাটিতে যানচলালের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ফসলি জমির পাশাপাশি ওই এলাকার রাস্তাঘাটও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে। আর গ্রামের শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও স্কুল শিক্ষার্থীরাও এই বেপরোয়া মাটি ভর্তি ট্রাক্টরের জন্য আতঙ্কিত। তাই চুয়াডাঙ্গা জেলার সুযোগ জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, গ্রামবাসী ও সচেতন মহলের মানুষ।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি ও বালি কাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আবারও তিনি এমন কাজ করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি আবারও তিনি এমন কাজ করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও আরও বলেন, কোনভাবেই মাটি ও বালি কাটার কাজ বরদাস্ত করা হবে না। খবর পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করবো।
তবে এ ব্যাপারে মাটি বিক্রি সিন্ডিকেটের হোতা অভিযুক্ত জিয়া বলেন, ‘আমি বিভিন্ন স্থানে জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি ক্রয় করে ব্যবসা করি। আর মাটি কাটার জন্য সরকারি কোন কাগজ পত্র নেই, তবে সব ম্যানেজ করেই এই কাজ করি।’