উইলিয়াম এইচ.ম্যাক র্যাভেন মার্কিন নৌবাহিনীতে ৩৭ বছর চাকুরী করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস সিস্টেমের চ্যান্সেলর। তিনি ‘সীল’ ট্রেনিং প্রাপ্ত একজন নৌ-অফিসার । পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ট্রেনিং প্রাপ্ত একটি বাহিনী। এই বাহিনীকে আফগান যুদ্ধে ও মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক যুদ্ধের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার ও ওসামা-বিন-লাদেনকে হত্যা করতে ব্যবহার করা হয়। ম্যাক র্যাভেন এই ‘সিল’ ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেন। তার লেখা একটা বেস্ট সেলার বই “মেক ইয়োর বেড”। এখন প্রশ্ন হলো-কি আছে এই বইয়ে? বইটিতে ১০টি চ্যাপটার আছে। প্রতিটি আলাদা আলাদা চ্যাপটারের শিরোনামের সাথে যে বিষয়টা কমন রেখেছেন তা হলো-তুমি যদি বিশ^কে বদলাতে চাও—। যেমন প্রথম চ্যাপ্টারের শিরোনাম হলো-তুমি যদি বিশ^কে বদলাতে চাও-তাহলে (সকালে) তোমার বিছানা গুছিয়ে রাখ। এটাই বইটিরও শিরোনাম। ম্যাক র্যাভেনের ব্যাখ্যা হলো-দিনটা শুরু করতে হবে-একটি সম্পূর্ণরূপে ভাল কাজ সম্পাদনের মধ্য দিয়ে। তার মতে-কাজটি ছোট কিন্তু কঠিন এবং এই অভ্যাসের মাধ্যমে তোমার জীবন, এমন কি দুনিয়া বদলে যেতে পারে। পুনরায় ব্যবহারের জন্য বিছানা তৈরী একটা আনন্দ তৈরী করতে পারে এবং এই সেন্স তোমাকে জাগ্রত করতে পারে। এটি অন্যান্য ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এভাবেই একটা ভাল থেকে অন্য ভাল কাজের অনুপ্রেরণা আসে। যদি তুমি এই ছোট কাজটা সঠিকভাবে না করতে পার-তাহলে অন্য কাজগুলো কিভাবে করবে? যদি কোন একটা দিন খারাপভাবে আসে-তাহলে তুমি বিছানায় এসে অন্তত একটা সাফল্য খুঁজে পাবে এবং আগামী দিনটা ভাল কাটবে-অনুপ্রেরনা পাবে। সীল ট্রেনিং এর কঠোর অনুশাসনের মধ্যে-তাই এটাকে অগ্রগন্য করা হয়েছে। এতকিছু বলার পরও ম্যাক র্যাভেন (৫২ পৃষ্ঠায়) বলেন-“চেঞ্জ ইজ নেভার ইজি”। তিনি সীল ট্রেনিং-কে ব্যক্তি জীবনে কতটা দরকার তা দেখিয়েছেন। আর, আমি সীল ট্রেনিং কে কর্মজীবনে কতটা জরুরী-তা প্রতিটি পাতায় পাতায় উপলব্ধি করেছি। যেমন-তুমি যদি বিছানা গুছিয়ে রেখে আসার মতো-অফিসে সকালে সময়মতো হাজিরাটা দাও-তাহলে সকল কাজ তোমার জন্য সহজ হবে। দি¦তীয় লেসন হলো-তুমি একা সফল হতে পারবে না। অফিস ম্যানেজমেন্ট বা উৎপাদন সেক্টরের কথা বলি-একজনের পক্ষে কোম্পানির জন্য সাফল্য আনা সম্ভব নয়। সীল ট্রেনিং এ সংহতি বাড়ানোর জন্য দলীয় ভাবে সমুদ্রে সাতরাতে হয়। সেখানে একে অন্যকে সাহায্য না করলে-জীবন সংহারের মত ঘটনা ঘটতে পারে। অফিসে বা কারখানায় খুব ভাল ‘একাডেমিক রেজাল্ট’ কখনো কখনো কাজে আসে না। সীল ট্রেনিং এ এই কথাটা বলা হয়েছে-“অনলি দ্যা সাইজ অফ ইয়োর হার্টস ম্যাটার্স”। চতুর্থ লেসন-লাইফ ইজ নট ফেয়ার-ড্রাইভ অন। পঞ্চম লেসন-ফেইলিয়র ক্যান মেক ইউ স্ট্রংগার। এরূপ মোট দশটা লেসন রয়েছে এই বইয়ে। সীল ট্রেনিংয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ৪ মাইল দলীয়ভাবে সাতারের পর্ব রয়েছে। মানুষ খেকো-সাদা হাঙ্গর থেকে বাঁচতে দলগতভাবে সাঁতরাতে হয়। বৃত্তাকারে এবং সবাই বাইরে নজর রেখে সাঁতরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। নিজের চিন্তা করলে কেউ-ই বাঁচতে পারে না। এই ট্রেনিং টিমমেটদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে চুড়ান্ত ভূমিকা রাখে। ওসামা-বিন-লাদেনকে হত্যা করতে মাত্র ১২ জন সীল ট্রেনিং প্রাপ্ত অফিসার কাজে লাগানো হয়েছিল। ম্যাক র্যাভেনের ‘মেক ইয়োর বেড’ বইয়ের শেষ লেসনটা আমার খুব ভাল লেগেছে তা হলো-“নেভার ইভার কুইট।” কখনোই হাল ছাড়া যাবে না। কঠোর পরিশ্রম আর পেইনকে ভয় পেয়ে ছেড়ে যাওয়া সহজ, কিন্তু এই ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রনা আরও বেশী কষ্টদায়ক। তুুমি ছেড়ে গেলে-কিন্তু তোমার জীবনের কোন কিছুই সহজ হবে না। বইটাতে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের গ্রেফতার পরবর্তী আয়োজনের বিষয়টা খারাপ লেগেছে (এটা যৌক্তিক না, মনে হয় আমি একটু বেশী ইমোশনাল )। আর ভাল লেগেছে-আফগানীস্থানে দুই পা হারানো সৈনিকের জন্য কমান্ডার ম্যাক র্যাভেনের সহানুভূতি। রোয়েনা বলে উঠলো, “তোমার কাছে শুনে-বইটা পড়তে ইচ্ছা জাগলো। হাতের বইটা শেষ হলেই আমি শুরু করবো।” আমি বললাম- দ্বিতীয়বার কোন বই পড়লে-এটাই একমাত্র। কর্পোরেট জগতেও বই সমানভাবে সমাদৃত। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী