আকাশ খবর ডেস্ক:
নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানসহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য জানা যাবে একটি অ্যাপ থেকে। শুধু তাই নয়, ভোটের দিনে কত ভোট পড়ল কিছু সময় পরপর সেই তথ্যও জানা যাবে এখান থেকেই। এমন আরও অনেক সুবিধা মিলবে নির্বাচন ‘অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা ও স্মার্ট নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা’ অ্যাপে। ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা এই অ্যাপের উদ্বোধনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ অন্য কমিশনাররা একই সুরে বললেন, এই অ্যাপ চালুর ফলে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত কিবাং শোডাউনের যে সংস্কৃতি আছে সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা তৈরির ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবেন এই অ্যাপ।
রোববার (১২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অ্যাপ উদ্বোধনকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, নির্বাচনের যে অ্যাপ উদ্বোধন করা হলো এটা স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে খুব সহায়তা করবে। ভোটে দুই ঘণ্টা পরে আমি কী পেলাম, চার ঘণ্টা পরে কী পেলাম তা জানতে পারব। এই অ্যাপ স্বচ্ছতা সৃষ্টিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কাজেই একটু কষ্ট করে আমাদের শিখে নিতে হবে। কীভাবে আমরা ব্যবহার করব।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এই পদ্ধতি চালু করতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে নয় কোটি ১১ লাখ টাকা এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
সিইসি বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে যে শোডাউন হয়, তা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এটা করতে গিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ হতে পারে। মনোনয়নপত্র সাবমিশন (জমা) করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্তও হন। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এ ধরনের অনাচারগুলো কমে আসতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।
ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার লে. জেনারেল অব. মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। আর এই অ্যাপটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন, এনআইডি অনুবিভাগের মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, গত ৫০ থেকে ৬০ বছরে প্রযুক্তির যে পরিবর্তন হয়েছে, তা অবিস্মরণীয়। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ। আমরা বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে অনলাইনে সাবমিশন ব্যবহার করেছি, এটা কঠিন কিছু না। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এটা অনেক আধুনিক হবে।
সিইসি বলেন, মনোনয়নপত্র জমার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহার করার জন্য। অনলাইন পদ্ধতিতে এই অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। সিইসি আরও বলেন, আমার এক ভাই বলছিলেন, কীভাবে এটা ব্যবহার হবে। আমার একটা অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে বলি। ৯৭ থেকে ৯৮ সালে আমি যখন কম্পিউটার ইউজ করতে শুরু করি, আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বব্যাংক থেকে প্রতিনিধিরা আসতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিকভাবে যাতে কম্পিউটারগুলো কেনা হয়। এর ফলে আমাদের প্রযুক্তি শেখাচ্ছে আর বলা হচ্ছে অনলাইন শপিং। এটা ইংরেজিতে বলছে তখন ইংরেজি খুব ভালো বুঝতাম না, বুঝতে গিয়ে একটু ভুল বুঝে ফেলেছিলাম। অনলাইন শপিং বলতে বুঝতে পেরেছি কম্পিউটারে শপিং করা যাবে। কিন্তু সন্দেহে ছিলাম এটা কীভাবে সম্ভব। আমি হয়তো এক কেজি গরুর মাংস ও রসগোল্লা কিনব। কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব। এটা কীভাবে আসবে প্রিন্টার দিয়ে, না তার দিয়ে, না অন্যভাবে। লজ্জায় এই বিষয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। তারের ভেতর দিয়ে দুই কেজি মাংস কীভাবে আসবে তা বুঝতে পারিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে এখন শিখে গেছি। আমি এখন অনলাইনে আমার সমস্ত ইউটিলিটি বিলগুলো পে করি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিগত পাঁচ থেকে সাত বছর অনলাইন ব্যবহার করি, এটা খুবই সহজ এবং স্বস্তিদায়ক। এর আগে ২৫০ টাকার টেলিফোন বিল দিতে গিয়ে ৫০০ টাকা পে করতে হতো, কেউ এগুলো দিয়ে আসতো। অনলাইন আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয়। নির্বাচনের যে অ্যাপ উদ্বোধন করা হলো এটা স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে খুব সহায়তা করবে।
অনলাইন ভোটিংয়ের দাবির জবাবে সিইসি বলেন, এখনো ঘরে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও চালু হয়নি। তবে বর্তমানে ভারত চেষ্টা করছে ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটিং সিস্টেমের। ওরা সফল হলে আমরাও প্রবর্তন করতে পারব। তবে কবে চালু হবে তার নিশ্চিয়তা এখন দিতে পারছি না।
এসময় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, আমাদের কমিশন প্রযুক্তিনির্ভর। আমরা অতীতে দেখেছি ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, হাতি ঘোড়া নিয়ে মনোনয়ন সাবমিশন করা হতো। ফলে আচরণ বিধি ভঙ্গ হয়। এছাড়া নমিনেশন সাবমিশনে বাধা দেওয়া হতো। তবে এই অ্যাপসে সেই সমস্যা থাকবে না। ভোটাররা তাদের প্রার্থীদের দেখতে পারবেন।
ইসি বলেন, প্রার্থীরা ঘরে বসেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। এছাড়া ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন। আমারা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি, এটা স্বচ্ছতার প্রতীক। এই অ্যাপ ফেয়ার এবং ট্রান্সপারেন্ট। আশা করি অ্যাপসের সুফল ভোগ করবো। এই উদ্যোগ বিদেশেও প্রশংসিত হবে।