নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির কয়েকজন সাবেক নেতার দল ‘তৃণমূল বিএনপি’। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন শমশের মবিন চৌধুরী। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন যোগ দেয়া নেতাকর্মীদের রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তৃণমূল বিএনপির কো-চেয়ারপারসন কে এ জাহাঙ্গীর মাজমাদার। আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আনাস আলী খান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) শেখ হাবিবুর রহমান প্রমুখ। তফসিল ঘোষণার আগে আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দলটির এই ঘোষণা এলো। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার নতুন একাধিক দলকে মাঠে নামিয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। বিএনপির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে ভোটে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তৎপরতাও জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ। এ পটভূমিতে গতকাল বুধবার নতুন নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি নতুন নেতাকর্মীদের যোগ দেয়ার অনুষ্ঠানের দলটির নেতারা এ নির্বাচনের অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। যোগদান অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, টাঙ্গাইল-৫ আসনের বাসিন্দা শরিফুজ্জামান খান ও সাভার থেকে আসা আইনজীবী মাহবুব হাসান তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন সংসদীয় আসনের বাসিন্দা ও বিভিন্ন দলের কর্মী পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা যোগ দেন। টাঙ্গাইল-৪ আসনের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম দলে যোগ দিয়ে বলেন, আমি শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। কারও প্ররোচনায় নয়, নিজের ইচ্ছায় এই দলে যোগ দিয়েছি। কুমিল্লা-২ আসনের বাসিন্দা মাঈনুদ্দীন নিজেকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন। বাগেরহাট-৪ আসনের আবুল বাশার চৌধুরী বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন। নেত্রকোনা-২ আসনের মোহাম্মদ আলী ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সন্তোষ শর্মা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ফেনী-৩ আসনের খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া বিএনপির, আইভি সরকার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং লস্কর হারুনুর রশীদ এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আছে দেশ, এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি মূল বিরোধী দল হবে বলে তাদের কেউ কেউ প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়, আজ ৮ নভেম্বর অসংখ্য নেতাকর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা অক্ষরে অক্ষরে প্রয়োগ করে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে। নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে প্রার্থী দেবো। জ্বালাও-পোড়াও হত্যার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। সেটা লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা হোক কিংবা পেট্রোলবোমা দিয়ে হত্যা হোক। তৃণমূল বিএনপি কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না জানিয়ে দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এটি হবে জনগণের দল। দলের প্রত্যেক সদস্য হবেন এই দলের নেতা। তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্র যাবে তৃণমূলের কাছে। তৃণমূল বিএনপি হবে বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নয়, দলটির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে ভোটে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপরতা জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে যাদের বের করে আনা সম্ভব হবে, তাদের সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া কয়েকটি দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির নামও রয়েছে।