টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং এনার্জি ম্যানেজমেন্ট অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। এনার্জি ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিক থাকে তাহলে টাইম ম্যানেজমেন্টও ঠিক রাখা সম্ভব। মানব শরীর-মন যদি দূর্বল থাকে তাহলে টাইম ম্যানেজমেন্ট বা রুুটিন অনুযায়ী কোন কাজই করা সম্ভব হয় না। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যতো চর্চা হয়-তার কানা কড়ি পরিমাণও এনার্জি ম্যানেজমেন্ট চর্চিত নয়। সে কারণেই আমাদের মুঠোর আঙ্গুলের ফাঁক গলে খসে পড়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট; এলার্ম যন্ত্রটি যতোই চিৎকার করুক-টাইম ম্যানেজমেন্ট তখন আর উঠতে পারে না।
এনার্জি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আলোচনার শুরুতেই আসে দৈহিক স্টামিনা বা শক্তির বিষয়টি। হাঁটা, গাড়ী চালান, অথবা যে কোন ধরণের মুভমেন্টের জন্য শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি মেন্টাল এনার্জির প্রসঙ্গও আলোচনায় এসে যায়। সঠিক ইমোশন, মনোযোগ, ও ইচ্ছাশক্তির কারণে মানুষ সক্রিয় হয়। হাঁটতে যেমন হাটুর অস্তিমজ্জায় জেলির প্রয়োজন হয়, কিন্তু মনের কি লাগে? মন যখন খারাপ বা চাপে থাকে, তখন মনের শক্তি ব্রেইনকে অনুসরণ করে। আমাদের দৈহিক সীমাবদ্ধতা আছে-যেমন-খাওয়া, ঘুমান অথবা দৌড়ানোর একটা নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। একটা গবেষনায় দেখা গেছে-মানুষ যখন ঘুমায় তখন অন্য সময়ের চেয়ে আড়াইগুন বেশী এনার্জি খরচ হয়। [খরভবযধপশ.ড়ৎম]
মনের শক্তির ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশী এনার্জির প্রয়োজন হয়। যেমন-আমাদের ফোনের চার্জ যখন ১% থাকে-তখন ফোনটা খুব বাজে ভাবে সার্ভিস দিতে শুরু করে, রিং এর শব্দ শোনা যায় না, অপর প্রান্তের কথা শোনা যায় না, বাজে বাজে সিগনাল আসতে থাকে। কিন্তু ফুল চার্জ পেলে মোবাইলটা পাওয়ার হাউজ হয়ে উঠে, সমস্ত ফাংশনগুলো তখন জেগে ওঠে। মাঝে মাঝে আমরা অন্ধকারে টর্চের কাজেও ব্যবহার করি। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। একদম কার গাড়ীতে তৈল ঢালার মত মনেরও খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
এটা গণিতের মতো সহজ ও সরল সমীকরণ হলো-হাইয়ার (উচ্চ) এনার্জি = বেটার প্রোজক্টিভিটি। আমরা যদি পরিপূর্ণ এনার্জি নিয়ে অফিসে পা রাখি-তাহলে ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুঁটতে পারবো। আর এর বিপরীত হলে আমাদের পারফরমেন্স হবে হতাশাজনক। পরিপূর্ণ এনার্জি দিনকে নিজের করে নিতে সাহায্য করে। ৪০০০ মানুষের উপর গবেষনা করে দেখা গেছে-রাতের খারাপ ঘুম দিনের খারাপ পারফরমেন্সকে নিমন্ত্রণ্য করে আনে যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হলো-২০০০ ইউএস ডলার (প্রতি বছর)। তাই পযার্প্ত এনার্জি শুধুমাত্র ‘মুড বুষ্টার’ই নয়, এটা ‘মানি সেভার’ও ।
জীবন শুধুমাত্র কাজের জন্য নয়। এই জীবনে স্বপ্ন, শখ ও একান্ত নিজের বা ব্যক্তিগত কিছু বিষয় থাকে, যা পূরণ করতেও এনার্জির প্রয়োজন। দূর্বল বা চার্জবিহীন ব্যাটারী দিয়ে সেপথে বেশীদূর আগানো যায় না। আর শুধু কাজ করে এসকল ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায় না-এর পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও ইন্টারেস্ট থাকতে হয়। পরিপূর্ণ চার্জ থাকলে একজন পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারবে, বুদ্ধিমত্তার সাথে রিয়্যাক্ট করতে পারে-এবং সেই সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জায়গা তৈরী করতে পারে।
‘লো’ এনার্জি কখনো কখনো স্বাস্থ্যের জন্য ঝামেলাপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানব শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ কে ভেঙ্গে ফেলে, ব্লাড প্রেসার ও হার্ট ডিজিজের মতো রোগ দূর্বল এনার্জি ডেকে আনতে পারে। তাই এনার্জি ঘাটতি শুধু একটা দিনকে প্রভাবিত করে না, মাঝে মাঝে সারাটা জীবনকেও প্রভাবিত করতে পারে।
রোয়েনা বললো,“মনের এনার্জি ঘাটতি দূর করতে আমাদের করনীয় কি? কিভাবে একজন মানুষ পূর্ণশক্তি নিয়ে তার দিনটি শুরু করতে পারবে?” উত্তরে প্রথমেই তোমাকে বলবো, কেন পাওয়ার সিস্টেম ব্যর্থ হয়-
১.স্ট্রেস-স্ট্রেসকে কেউ কেউ ‘এনার্জি ড্রিঙ্কার’ বা ভ্যাম্পায়ার বলে আখ্যা দিয়েছেন। ২. নেগেটিভ ইমোশন ৩. মোটিভেশনের অভাব ৪. স্লিপ ইস্যু ৫. অনিয়মিত সিডিউল ৬. অন্য কাজে এনার্জি শেষ করা ৭. দূর্বল ম্যানেজমেন্ট ৮. ফুড ইস্যু ৯. নেশা জাতীয় অভ্যাস ১০. ডায়াবেটিস ১১. অন্যান্য রোগ ১২. ডিসট্রেস। এইসব বিষয়গুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে চলতে পারলে পাওয়ার/এনার্জি ম্যানেজমেন্ট ঠিক হতে পারে। তবে শেষ টুইস্টটা তোমার হাতে-সেটা হলো- “ইয়োর এনার্জি, ইয়োর চয়েজ।” (ণড়ঁৎ বহবৎমু, ণড়ঁৎ পযড়রপব.)
(চলবে…..)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী