নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২৩। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা ব্রিজের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ এই স্লোগানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার ও কমিউনিটি পুলিশিং সমম্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ্ আল মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য শিরীন নাঈম পুনম, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা কমিনিউটি পুলিশিং সমম্বয় কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর কামরুজ্জামান, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আলামিন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গরিব রুহানী মাসুম।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাই, তার পেছনে মূল কাজটিই করে পুলিশ। কমিউনিটি যখন পুলিশকে সাহায্য করে, তখন অপরাধ থাকার সুযোগ নেই। জাতির পিতা বলেছিলেন তোমাদের জনতার পুলিশ হতে হবে। সেটার মূলমন্ত্রই এখন কমিউনিটি পুলিশিং। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হবো। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পুলিশ। আজকের সুন্দর উপস্থিতি, প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ আমাকে উজ্জিবিত করে যে, চুয়াডাঙ্গায় যেকোনে ধরনের অপরাধ আমরা শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন ছিলো। পুলিশিং কমিউনিটির কারণে গ্রামে মামলা করার প্রবণতা কমেছে। পুলিশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরব একটা ইতিহাস আছে। পুলিশ এখন অনেক স্মার্ট, চৌকস। লজিস্টিক সাপোর্ট ভালো হয়েছে। আমরা আশা করি পুলিশ, দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদেরকে গৌরবান্বিত করার জন্য সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। চুয়াডাঙ্গা একসময় সন্ত্রাসী এলাকা ছিলো। পুলিশের তৎপরতায় সেই সন্ত্রাস এখন নেই।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য শিরীন নাঈম পুনম বলেন, জনতাই পুলিশ এবং পুলিশই জনতা। এটা বঙ্গবন্ধুর ট্রপিক ছিলো। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা আবার ক্ষমতায় এসে আমাদেরকে রুপকল্প ২০২১ বলেছে। তখন কিন্তু আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারিনি এটা কি করে সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করবো, স্যাটেলাইট পাঠাবো, ট্যানেল করবো, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করবো, পদ্মা সেতু করবো। আমরা মেট্রোরেল করবো। চুয়াডাঙ্গাতে এত বড় বড় স্থাপনা করবো। যেগুলো অতীতে ছিলো না। একটা সময় রাস্তা ঘাট ছিলো না, স্কুল-কলেজের কোনো বিল্ডিং ছিলো না। এখন তার সবই হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য। এই উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা আছে। সেই সাথে পুলিশ বাহিনীকেও আধুনিকায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তিনি আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হলো নারী। সেই নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না। আজ যেমন র্যালিতে নারী পুলিশ সদস্যরা আসছিলো ঠিক তেমনি প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদেরকে এগিয়ে নিতে হবে, তাহলেই দেশকে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, আমরা জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ অপরাধ সংঘটের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ খবর আসে সাধারণ জনগণের মধ্য দিয়েই, তাই পুলিশ জনগণের বন্ধু। এই কমিউনিটি পুলিশিংকে আমাদের স্মার্ট করতে হবে এবং সেটি আপনাদের সহযোগিতায় সেজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
আলোচনা সভা শেষে দিবসটি উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগীতায় বিজয়ী ও সেরা কমিউনিটি পুলিশ অফিসাদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। পরে, বিকেলে পুলিশ লাইন্স মাঠে জেলা পুলিশ সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশিং নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতায় ‘জেলা পুলিশ একাদশ’ বনাম ‘কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য একাদশ’ অংশগ্রহণ করে। প্রীতি ফুটবল খেলায় জেলা পুলিশ একাদশ ৩-২ গোলে জয়লাভ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা কমিনিউটি পুলিশিং সমম্বয় কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর কামরুজ্জামান, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের সকল পদমর্যাদার অফিসার ফোর্স, কমিউনিটি পুলিশিং নেতৃবৃন্দ এবং প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়গণ।
এদিকে, আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলার কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য হিসেবে আইজিপি’র পক্ষ থেকে সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য নির্বাচিত হন। গতকাল শনিবার সকালে ডিসি সাহিত্য মঞ্চে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার সম্মাননা ক্রেস্ট কামাল হোসেনের হাতে তুলে দেন। কামাল হোসেন আলমডাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং এর কোষাধ্যক্ষ ও আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।