মো. জাকির হোসেন:
যে ভূখণ্ডকে ইসরায়েল নামে ডাকা হয়, তা আসলে ইসরায়েলের ভূখণ্ড নয়। এটি ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানরা পরাজিত হলে ১৯২২ সালে জাতিপুঞ্জ তার গঠনতন্ত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফিলিস্তিন প্রশাসন পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে সাময়িকভাবে ম্যান্ডেট প্রদান করে।
উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবকাঠামো গড়ে ওঠার পর ফিলিস্তিনকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজিত রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকেও অধিকৃত কিছু অঞ্চলের সাময়িক শাসনের দায়িত্ব জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর অর্পণ করা হয়।
বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশপ্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজিত তুরস্ক, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের কাছ থেকে অধিকৃত যেসব অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের অধীনে প্রদান করা হয়েছিল, একে একে সবাই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণতি লাভ করেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা দেয় ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে।
ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটেনকে এ কাজে সহযোগিতা করে জাতিসংঘ। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ১৮১ নম্বর সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিন ভাগ করে ফিলিস্তিন ও ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সাধারণ পরিষদ। ফিলিস্তিনে মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ আরব আর ৩৩ শতাংশ ছিল ইহুদি।
মোট ভূমির ৮৫ শতাংশের মালিক আরবরা আর ৭ শতাংশের মালিক ছিল ইহুদিরা। আরবদের নিয়ন্ত্রণে ৮৫ শতাংশ ভূমি থাকা সত্ত্বেও ৪৪ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আর ৭ শতাংশের মালিক ইহুদিদের জন্য ৫৬ শতাংশ নিয়ে ইহুদি রাষ্ট্র গঠন করার সুপারিশ করে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিন ভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানালে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা চরম বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। নিরাপত্তা পরিষদের সামনে প্রশ্ন দাঁড়ায়, কোনো রাষ্ট্রের জনগণের সম্মতি ছাড়া ওই রাষ্ট্রকে ভাগ করার এখতিয়ার সাধারণ পরিষদের আছে কি না? সাধারণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদকে যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছে, তা জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের কাজের অন্তর্ভুক্ত কি না? বিতর্ক শেষে ঐকমত্য হয়, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ শুধু তখনই সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, যখন আগ্রাসন বা অন্য কোনো কারণে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা হুমকির মুখে পড়ে।
রাষ্ট্র বিভাজনের পরিকল্পনা, যা পক্ষগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তা নিজেই শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি।
নিরাপত্তা পরিষদ কখনোই এমন কাজে যুক্ত হতে পারে না। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি চীনা প্রতিনিধি মত দেন, নিরাপত্তা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্বশান্তি বজায় রাখার জন্য। এটি খুবই দুঃখজনক হবে, রাষ্ট্র ভাগের নাম করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে জাতিসংঘ নিজেই যদি যুদ্ধের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১ আগস্ট ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ওপর তাদের ম্যান্ডেট অবসানের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় দ্রুত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব করে নিরাপত্তা পরিষদ। উদ্বেগাকুল এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা একতরফাভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তাদের ঘোষণার ভিত্তি হিসেবে সাধারণ পরিষদের ১৮১ নম্বর সিদ্ধান্তকে উল্লেখ করা হয়, যেখানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা রয়েছে। আশপাশের আরব দেশগুলো ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে হামলা চালালে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পুরোটাই দখল করে নেয় (শুধু গাজা মিসরের দখলে এবং পশ্চিম তীর জর্দানের দখলে ছিল)।
আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমাগত তিক্ততার প্রেক্ষাপটে ১৯৬৭ সালে আবারও আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়। পাঁচ দিনের যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া ও জর্দানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের কাছে পরাস্ত হয়। ইসরায়েল গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্দানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। ইসরায়েল জোর করে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভূমি দখল করে নিতে শুরু করে। মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসায় ব্যারিকেড দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। নামাজরত মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। ইসরায়েলের নিষ্ঠুর নিপীড়ন-নির্যাতন ও ভূমি দখলের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে স্বাধীনতাকামী সংগঠনের জন্ম হয়। এসব সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েলের নিত্য সংঘর্ষ নিয়তি হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ সরকার ও জাতিসংঘ মিলে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের রাষ্ট্র কেড়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তার একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে শান্তি আলোচনা চলছে কয়েক দশক ধরে। আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের অবস্থানে ইসরায়েলকে পিছু হটার কথা বলা হয়। কিন্তু ইসরায়েল একের পর এক জাতিসংঘসহ সব শান্তি প্রস্তাব উপেক্ষা করে ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি ভূমি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নতুন নতুন এলাকা দখল করতে শুরু করে। এরূপ দখল করা অঞ্চলকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালত বেআইনি ঘোষণা করলেও ইসরায়েল সেসবের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। ইসরায়েলই হচ্ছে একমাত্র রাষ্ট্র, যার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো নির্বিকার। অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব অপরাধের সহযোগী হিসেবে ইসরায়েলকে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ দিচ্ছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তেরও সরাসরি বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের এবং ইরাক-আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত করছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বেনসৌদা প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানিয়েছিলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারে। কিন্তু সেই কাজ শেষ করতে পারলেন না তিনি। বেনসৌদাকে যেন আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সে জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোর লবিং চালায় ইসরায়েল। তবে তাঁর ওপর বেশি চড়াও ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফাতু বেনসৌদাকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তদন্ত শেষের আগেই আইসিসির পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে বেনসৌদাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমন আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে ইসরায়েল জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ৫৬ শতাংশ ভূমির বাইরে ফিলিস্তিনের জন্য সংরক্ষিত প্রায় ৯০ শতাংশ ভূমি এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে। হামাসের হামলার সূত্র ধরে বাকি অংশ, বিশেষ করে গাজা দখল করতে অতীতের সব বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযান। ফিলিস্তিনের পরিচয় মুছে ফেলতে গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে ইসরায়েল। হাসপাতালে বোমা ফেলে পাঁচ শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। পলায়নরত ফিলিস্তিনিদের ওপর আকাশ থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। শরণার্থী শিবিরে বোমা ফেলে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে এরই মধ্যে প্রায় হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু। মর্গে স্থান সংকুলান না হওয়ায় আইসক্রিমের ফ্রিজে মরদেহ রাখা হচ্ছে। গাজার আরেক হাসপাতাল আল-কুদস খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির দুটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মানে আরো ফিলিস্তিনি হত্যা ও ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল গাজা কেড়ে নেওয়ার ইসরায়েলি মিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
অনেক মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ বিশ্বাসভঙ্গ কিংবা কোনো ভণিতার আশ্রয় নেয়নি। বাংলাদেশ ইসরায়েলি দখলদারি ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অটল রয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের পর প্রথম যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, ইসরায়েল তাদের অন্যতম। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে। নবপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি খুবই প্রয়োজন ছিল। তবু বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি জোরালো সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলের স্বীকৃতি গ্রহণ করেনি। ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনকে সমর্থন করা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে সমর্থন করে বাংলাদেশ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে সহায়তা করে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের চতুর্থ ন্যাম সম্মেলনে, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁর প্রথম ভাষণে এবং ১৯৭৪ সালে ওআইসির দ্বিতীয় সম্মেলনে ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। ঢাকায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পিএলওর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি ছাত্রদের বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনের সামরিক সদস্যদের বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সামরিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফিলিস্তিনিদের যে জায়গাগুলো দখল হয়ে গেছে, সেগুলো তাদের ফেরত দেওয়ার দাবি পুনরায় উত্থাপন করেছেন। ফিলিস্তিনি শহীদদের জন্য জুমার পর দেশের প্রতিটি মসজিদে এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেন দোয়া ও প্রার্থনা করা হয় সে আহ্বান জানিয়েছেন। আর ২১ অক্টোবর শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। সেদিন আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের জন্য ওষুধসহ শুকনা খাবার এবং শিশু ও নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এবারই প্রথম নয়, ২০২১ সালে আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে নিরীহ মুসলমান এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রতিবাদ করেছেন। ইসরায়েলি হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন। শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েলের দখলের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে সেই এলাকা দখল করে ইসরায়েলি বাহিনী মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ প্রস্তাব, আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ও কোয়ার্টেট রোডম্যাপের আলোকে স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকটের একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র কেড়ে নেওয়ার প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সবক দিতে আসছে প্রতিনিয়ত। ইসরায়েলের দুষ্কর্মের প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহনকারী আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল। মুখে ইসলামের কথা বললেও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ, হাসপাতালে বোমা ফেলে পাঁচ শতাধিক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা এবং গাজা কেড়ে নেওয়ার প্রাণঘাতী একতরফা যুদ্ধের পরও এরা যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট রাখতে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ডে সহায়তা দেওয়ার বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। তবু আমাদের বিরোধী দল যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টির ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। পবিত্র কোরআনে নির্যাতিত মুসলমানের পক্ষে যেখানে জিহাদের আদেশ রয়েছে, সেখানে তারা মৌখিক প্রতিবাদ করার সাহসও রাখে না। এদের চিনে রাখুন। বাংলাদেশকে এদের হাতে তুলে দিলে এরা বাংলাদেশকে অন্যের কাছে তুলে দেবে না তার নিশ্চয়তা কী?
লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়