দামুড়হুদা অফিস:
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তাইতো শঙ্খ, উলুধ্বনি আর ঢাকঢোল দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের মা দেবীদুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন ভক্তরা। আর এই উৎসবকে ঘিরে শেষে মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উপজেলার মণ্ডপে মণ্ডপে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী, উপজেলা পুজো উদযাপন কমিটির সদস্যসহ ভক্তরা।
পঞ্জিকায় তথ্যমতে, আসছে ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে আরম্ভ হবেন ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। চলবে আগামী ২৪ অক্টোবর। এদিন বিজয়ী দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ভক্ত ও পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। যার ফল ছত্রভঙ্গ (অশুভ)।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা কমিটির তথ্য মতে, এ বছর দামুড়হুদা উপজেলায় আগামী ২০অক্টোবর ২২ টি পূজা মন্ডপে দুর্গোপুজো অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী দুর্গা পুজোর উৎসবের আর মাত্র বাকি রয়েছে ২ দিন। প্রতিমা তৈরির শেষ, রঙের কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় শেষ হয়েছে। কাজেই উপজেলার সকল মন্ডপে মন্ডপে এখন চলছে শেষ প্রস্তুতি। প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনসহ ভক্তদের আকৃষ্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করেছে শিল্পীরা। তাইতো উপজেলার মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরি আর রঙ তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত করেছেন শিল্পীরা। শিল্পীরা নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন স্বাধ্যমত। তবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকায় এ বছর তাঁর ছাপ পড়েছে প্রতিমা তৈরির উপরেও। ফলে উপজেলার মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরিতে কিছুটা খরচ বেড়েছে। প্রতিমা তৈরি পুরোপুরি ভাবে সম্পন্ন করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ টাকা। ইতিমধ্যেই উপজেলার সকল মন্ডপের পুজো কমিটি পুরোহিত নির্বাচনের কাজও শেষ করেছেন।
দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মন্ডপে মন্ডপে চলছে রঙের কাজ। এরই মধ্যে আবার বেশ কিছু মন্ডপে প্রায় শেষ হয়েছে রঙের কাজ। এখন চলছে দুর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি, অলংকার পরানোর কাজ। পাশাপাশি প্রস্তুতি চলছে রঙিন কাগজ ও আলোকসজ্জার কাজও। দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা দাসপাড়া রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি আকাশ দাস জানান, আমাদের মন্দিরে সুষ্ঠুভাবে পুজো উৎসব সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছ। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরে জিনিস পত্রের দাম একটু বেশি থাকায় প্রতিমা তৈরিতে খরচ একটু বেশি হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরির সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী শুক্রবার মহা ষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে পুজো উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সঞ্জয় হালদার জানান, উপজেলার প্রায় মন্ডপের কাজ শেষের পথে। সুষ্ঠুভাবে পুজা উৎসব শুরু করে তা শেষ করার লক্ষ্যে কমিটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভক্তরা মা দেবি দূর্গাকে বরণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দিন গুনছেন। দামুড়হুদা উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উত্তম রঞ্জন দেবনাথের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সনাতন ধর্মসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসবকে ঘিরে বাড়ি বাড়ি চলছে উৎসবের আমেজ। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ৫ দিনব্যাপি চলবে এই উৎসব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে যোগাযোগ রাখছেন।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর জানান, পূজা মন্ডপের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সদস্যগণ ও আনসার সদস্যরা। প্রতিমা দর্শনে আসা সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মন্ডপ চত্বরে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল টিম সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করবেন। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা মিতা বলেন, প্রতিমা তৈরির স্থানসমূহ এবং পূজা মন্ডপ গুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুজো স্থানে যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ ও আনসার সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে সুষ্ঠুভাবে যেন পূজা উদযাপিত হয় সে লক্ষে জনপ্রতিনিধি সহ সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করছি।