নিজস্ব প্রতিবেদক:
জমি রেজিস্ট্রেশনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে সাফ-কবালা জমি রেজিস্ট্রেশন এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলায় সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছেন দলিল লেখক এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দলিল লেখক সমিতির নেতারা একাধিকবার দেখা করলেও প্রতিকার মিলছে না। দেয়া হবে স্মারকলিপি। আগামী শনিবার ঢাকায় বৈঠক করে কর্মসূচি দেবেন সারাদেশের দলিল লেখকরা। এ প্রসঙ্গে নিবন্ধন অধিদপ্তরের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জানান, এনবিআর কয়েক ধাপে কর বাড়িয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এনিয়ে এনবিআরের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা এনিয়ে কাজ করছে। তবে এমন কর নির্ধারণ দুঃখজনক বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন দাবি করেছেন, জমি রেজিস্টেট্রশনে কর কমানো হয়েছে। তবে উৎস করের কারণে জমি রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা হওয়ায় আরোপিত কর কমানো হবে কিনা- এ ব্যাপারে তার জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির মহাসচিব জুবায়ের আহমেদ জানান, ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সাফ কবালা দলিল এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। উৎস্য কর শতকরা ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে রেজিস্ট্রি করা গেলেও নতুন ভূমি আইনের কারণে নামজারী ছাড়া দলিল হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাঠাপ্রতি রেজিস্ট্রি খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অনলাইনে পে-অর্ডার জমা দেয়ায় কোনো কারণে ওইদিন জমি রেজিষ্ট্রি না হলে সেই টাকা অফেরতযোগ্য হয়ে যাওয়ায় রেজিস্ট্রি কমেছে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন করে উৎস্য কর নির্ধারণ করায় রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রীকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে এনিয়ে কথা বললেও সুরাহা হয়নি। আইনমন্ত্রী এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। রেজিস্ট্রি খরচ কোথাও শতকরা ৩০ আবার কোথাও ৪০ টাকা বেড়েছে। গুলশানে ২৭ লাখ টাকার জমি কিনলে রেজিস্ট্রি খরচ পড়বে ২৬ লাখ টাকা! উৎস্য কর কাঠাপ্রতি এক লাখ থেকে ধাপে ধাপে নির্ধারণ করা দুঃখজনক উল্লেখ করে জুবায়ের আহমেদ বলেন, আজ বুধবার তারা আইনমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন। বুধবার থেকে সারাদেশে দলিল লেখকদের কলমবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করে শনিবার সারাদেশের (৬১ জেলা) দলিল লেখক সমিতির নেতাদের ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ডাকা হয়েছে। ওইদিন সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সাভার দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীম জানান, কর বাড়ায় সাফ কবালা রেজিস্ট্রি এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। জমির ক্রেতারা খরচের হিসেব নিয়ে চলে যাচ্ছেন। হঠাৎ এমন খরচের কথা শুনে অনেকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে দলিল লেখকদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। জানা গেছে, জুলাই মাস থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন ফি দ্বিগুণ করায় এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন ক্রেতারা। আয়কর বিধিমালার ৬ ধারায় বলা আছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভায় ওই কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের যে কোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মৌজার জমির চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কিংবা এলাকাভিত্তিক কাঠা প্রতি ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধন ফি বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনের সংখ্যাও কমে গেছে। সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে আগের মতো ভিড়ও নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন দলিল লেখকরা। একাধিক রেজিস্ট্রি অফিসের উমেদার ও নকলনবীশরা জানিয়েছেন, নতুন সিদ্ধান্তে কর কমেছে মনে হলেও বাস্তবে অধিকাংশ জমির নিবন্ধন কর বেড়েছে। জাতীয় সংসদে গত ২০ জুন নতুন আয়কর আইন পাসের পর জমি ও ফ্ল্যাটের উৎসে কর দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর পর থেকেই ধস নামে জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে। এ খাতে রাজস্ব আয়ে ভাটা এবং সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে ৩ অক্টোবর নিবন্ধন কর পুনর্নিধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগে সব ধরনের জমি নিবন্ধনে একই করহার ছিল। পুনর্নিধারিত হারে মৌজার অবস্থান অনুযায়ী জমিকে পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করে কর ধার্য করা হয়েছে। এনবিআরের দাবি, এতে স্থানভেদে কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর কমেছে। তবে প্রকৃত চিত্র পুরো উল্টো। এক-দুটি শ্রেণিতে কর কমলেও বাকিগুলোতে উল্টো বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধন খরচ বেশি বেড়েছে। গ্রামের মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন।