নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পবৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল। একটি অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য অর্থবহ সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে প্রতিনিধি দলটি। সপ্তাহব্যাপী ঢাকা সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তারা এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে সুপারিশগুলো কখন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং না করলে কী হবে- সে সম্পর্কে ওই বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি। ঢাকায় বিভিন্ন মহলের সঙ্গে গত ৮ থেকে ১২ অক্টোবর সংলাপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যালোচনা মিশন (পিইএম)। ওই দলে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) ছয় সদস্য। যৌথভাবে এই মিশনের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি এনডিআই কোচেয়ার কার্ল এফ. ইন্ডাফার্থ এবং ইউএসএআইডির সাবেক উপপ্রশাসক, আইআরআই কোচেয়ার বনি গ্লিক। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য জামিল জাফর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সাবেক সহযোগী পরামর্শদাতা আইআরআইর এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও, মনপ্রীত সিং আনন্দ, এনডিআই আঞ্চলিক পরিচালক, এশিয়া-প্যাসিফিক। প্রতিনিধিদের সঙ্গে এনডিআই এবং আইআরআইয়ের প্রযুক্তিগত এবং কান্ট্রি এক্সপার্টরাও যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বর্তমান ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য, যুব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে জড়িত সংস্থার প্রতিনিধি, মিডিয়া প্রতিনিধি, আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিধি দলটি বিবৃতিতে বলেছে, গত কয়েক দশক ধরে, দেশটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূর করা এবং পরিবেশগত নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। তবে রাজনৈতিক পক্ষাঘাতগ্রস্ততা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্রমহ্রাসমান বিশ্বাস এই অগ্রগতির ওপর ছায়া ফেলছে এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করার হুমকির মুখে ফেলছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও সংঘাতহীনভাবে’ আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান নির্বাচনী বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা ও অর্থবহ আলোচনাসহ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঁচ দফা সুপারিশ করে। সুপারিশগুলো হলো- ১. নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে উদার কথাবার্তা, উন্মুক্ত এবং গঠনমূলক সংলাপ। ২. মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে। ৩. অহিংস থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ৪. সব দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। এবং ৫. নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সক্রিয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি লিটমাস টেস্ট। বাংলাদেশের জনগণই চূড়ান্তভাবে তাদের বিশ্বাসযোগ্য ও বৈধ নির্বাচন এবং তাদের দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন নির্ধারণ করবে। আমাদের সুপারিশগুলো একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে, যা গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অর্জনে সহায়তা করতে পারে। বনি গ্লিক বলেন, অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক অহিংস নির্বাচন আয়োজনে যারা বাংলাদেশের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়ে খোলামেলা মতপ্রকাশ করেছেন, আমরা তাদের সবাইকেই মূল্যায়ন করি। ওই আলোচনা থেকে আমরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছি; কিন্তু আমাদের সুপারিশগুলো সেই পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর নির্বাচন পূর্ব-পরিবেশ পর্যালোচনা করতে আসা মার্কিন এ দলটির প্রতিবেদনকে আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।