শেখ লিটন:
কাগজে-কলমে শেষ হয়েছে নদী খনন কাজ। অথচ বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীর বুকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পাকা স্থাপনা। ভরাট হয়ে গেছে অনেক স্থান। নদীর জায়গা নিয়েও রয়েছে মামলা। ফলে এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে নবগঙ্গা খননকাজ। যদিও এসব জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে নদী খনন কাজ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাব্যতা ফেরাতে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল থেকে চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয় নবগঙ্গা নদীর খনন কাজ। খনন কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩১ মার্চ। ৩ বছর মেয়াদী ১৪ কিলোমিটার নদী খনন করতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদীটির ১৪ কিলোমিটার খনন করেছে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর ৩ কিলোমিটার খনন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এখনো বাকি রয়েছে এখনো ৫ কিলোমিটারের খননকাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নবগঙ্গা নদী এখন পানিশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক জায়গায় হয়নি খনন কাজ। নদীটির বুকজুড়ে বেধে আছে সরকারি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভবন। আর মামলা মোকাদ্দমায় খনন কাজ আটকে কিছু অংশ। নদীটির মাঝ বরাবর পুকুরের মতো করে খনন করে রেখে দেওয়া হয়েছে। এখনো এই খনন সমাপ্ত হয়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১ সালের মাঝ মাসের দিকে নবগঙ্গা নদীর খনন কাজ শেষ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
যে অংশটুকু খনন হয়েছে সেখানেও কচুরিপানা আর ময়লা আর্বজনায় ভর্তি হয়ে আছে। নেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ। এছাড়াও নদীর মাঝ অংশে ভরাট হয়ে গেছে। এতে নবগঙ্গা নদীর প্রাণ হারাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নামমাত্র খনন করেও কোন কাজে আসছে না নবগঙ্গা নদী। নদীর বুকে এখনো ঠাঁই দাড়িয়ে সরকারি-বেসরকারি পাকা স্থাপনা। অনেক জায়গায় বাকি খনন কাজ। আবার ভরাট হয়ে গেছে অনেক স্থান।
অভিযোগ উঠেছে, তড়িঘড়ি করে কাগজে কলমে কাজ শেষ করে সরকারি অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীর দু পারের মানুষ। সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে গেছে।
নদীর পাশ^বর্তী এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, সরকার যে কোটি কোটি টাকা দিয়ে নদী খনন করেছে তা নদী খনন সম্পন্ন হয়নি। নদীতে পানি নেই। ময়লা আর্বজনায় তা ভাগারে পরিণত হয়েছে। আমরা এই নদী থেকে পানি পাই না। নদীর পাশের আবাদি জমিতে আমরা পানি দিতে পারি না।
আরেক বাসিন্দা ইকতিয়ার রহমান বলেন, এই নদী খনন কাজ এখনো মামলায় আটকে আছে। আবার নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি ভবন। নদীটি মরে যাচ্ছে। নদী খননে সরকারে যে উদ্দেশ্য তা হাসিল হয়নি।
কথা হয় চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাজাহান আলির সাথে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদী রক্ষা কমিশন দেশে ৪৮ টি নদী খনন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে মাথাভাঙ্গার নদীর শাখা নবগঙ্গা নদী। যে উদ্দেশ্যে নদী খনন করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই সরকারের উদ্দেশ্য হাসিল করতে হলে এই নদী পুনঃখনন দরকার। না হলে হারাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, নবগঙ্গা নদী খননে এখনো ৫ কিলোমিটার বাকি আছে। তাই নদী খনন কাজ আটকে আছে। নদী রক্ষা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় সাপেক্ষে এই নদী ব্যবস্থাপনা করবে। বিভিন্ন কারণে নদী খনন আটকে আছে সেগুলো সমাধান হলে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।