নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে দুই হাজার ৪২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই সময় মারা গেছে ১৪ জন। এ নিয়ে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩৯৬ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন। দেশে এর আগে কোনো মাসে ডেঙ্গুতে এতসংখ্যক রোগী আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আগের মাস আগস্টে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মৃত্যু ৩৪২ জনের।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়। মৃত্যু ১৭৯ জনের।
সে বছর আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৬৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রেকর্ড ছিল। গতকাল এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে এক হাজার ৬৭৪ জন ঢাকা মহানগরের বাইরের ও ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি ৭৫১ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আটজন ঢাকার ও ছয়জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছে।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৩১.৬৭% রোগী ঢাকা মহানগরের
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে গড়ে প্রতিদিন দুই হাজার ৬৫৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮.৩৩ শতাংশ ঢাকার বাইরের। ৩১.৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
ডেঙ্গুতে গত এক মাসে গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের বেশি। এর মধ্যে ৫০.৭৫ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মহানগর এবং ৪৯.২৫ শতাংশ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর (একাধিক অঙ্গ বিকল) হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ শতাংশ রোগীর। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মারা গেছে ৮৭ শতাংশ। যাদের ৬৩ শতাংশের মৃত্যু ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে আক্রান্ত হচ্ছে। দুই কোটির মধ্যে ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার যেসব রোগী আসে, তাদের বেশির ভাগই আশপাশের জেলা থেকে আসা।
তিনি বলেন, এ বছর যিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি কিন্তু পরের বছরও বিপদের মধ্যে থাকবেন। এভাবে বিপদের শঙ্কা প্রতিবছর বাড়বে। এর সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। এর সমাধান একটাই। সেটা হলো নতুন রোগী যেন না হয়। যাদের হয়ে গেছে, তাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। যাদের হয়নি, সতর্ক থাকতে হবে তাদের যেন আর ডেঙ্গু না হয়।
ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে। এর মধ্যে দুটি টিকা উদ্ভাবন হয়েছে। কিন্তু এসব টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ টিকাগুলোতে কিছু সমস্যা রয়েছে। গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন প্রায় ৯ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় দেশে স্যালাইনের কোনো ঘাটতি নেই জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সাত লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। বাকি চার লাখ ব্যাগ স্যালাইনও দ্রুত চলে আসবে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন আসছে এবং তা হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমাদের দেশের যক্ষ্মা, চক্ষু ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি উদ্যোগ, যা জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। যার নাম শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ।’