১. এপিসোড ৪৪-এ আর্থার ইউনিষ্টন নামক এক ভদ্রলোকের বর্ণনা করেছিলাম-যিনি গত শতাব্দির চ্যাম্পিয়ন এমপ্লয়ী নির্বাচিত হন এবং বিল ক্লিনটনের হাত থেকে সেই পুরস্কারটি গ্রহন করেন। ২৩ বছর বয়স থেকে গাড়ী ধোয়ার কাজ শুরু করে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত একই কাজ করেন এবং এই দীর্ঘ চাকুরী জীবনে মাত্র একদিন ছুটি কাটিয়েছিলেন-স্ত্রী মারা যাবার দিনে।
২. পিটার ফার্ডিনাল্ড ড্রাকার, অষ্ট্রিয়ান-আমেরিকান ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট-শিক্ষক-লেখক, যিনি ৯৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ৩৯টি বই লিখে গেছেন-যার মধ্যে বেশ কিছু বই প্রায় ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। টেইল এ্যান্ড ফয়েল এর পরে তাকেই সবথেকে বেশী/বড় ইনফ্লুয়েনসিয়াল লেখক হিসাবে গণ্য করা হয়। বৃটিশ লাইব্রেরী তাকে ‘মডার্ন ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডির ফাদার’ বলে খ্যাত করেছে। এই মানুষটি ১৯০৫ সালে যখন মারা যান-জেনারেল ইলেকট্রিকসের সিইও জনাব জ্যাক ওয়েল্স তাকে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট ম্যানেজমেন্ট থিংকার অফ দ্যা লাস্ট সেঞ্চুরী’ বলে ঘোষনা দেন। জনাব পিটার ড্রাকার মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগেও আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করেছেন। তখন তার স্বাস্থ্য একদম ভেঙ্গে পড়েছিল। সেই সময় বিশে^র কোথায় কি ঘটছে তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি অন্যকে কিভাবে সাহায্য করবেন তা নিয়েও কথা বলেছেন। একটা গুজব আছে যে মারা যাবার দিনেও তিনি ফোন কল রিসিভ করে গেছেন।
আমাদের অফিসে অনেকে আছেন-যাদের রিটয়ারমেন্ট এখনও বহুদূর। কিছু আছেন-দু-এক বছরের মধ্যেই রিটয়ারমেন্টে যাবেন এবং কারও কারও অতি সন্নিকটে। আমি মাঝে মধ্যে এদের উদ্দেশ্যে বলি- রিটয়ারমেন্টের অর্থ এই নয় যে-আপনাকে আপনার সেরা কাজটা আর করতে দেয়া হবে না বা যে কোন কাজই আপনার জন্য নিষিদ্ধ। আপনি ছাঁদে বা বারান্দায় বসে-ইজি চেয়ারে দোল খাবেন। অবস্থাটা এমন দাঁড়ায় যে-দেরী করে ঘুম থেকে উঠা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং দিনটা তার কাছে অনেক বড়, ধীর ও একঘেয়েমি লাগে। রিটায়ারমেন্ট হলো মুধুমাত্র টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা এক্সারসাইজ।
রোয়েনা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কি আজ ‘রিটয়ারমেন্ট’ নিয়ে কথা শুরু করলে?” আমি বললাম, ‘না।’ আজকের বিষয় হলো-‘গ্রোয়িং ওল্ডার ভার্সাস গ্রোয়িং হোল’। কাজের ক্ষেত্রে আমরা এক সময় ক্লান্ত বোধ করি, আবার অনেকের শরীর অক্ষম হয়ে যায়-সেক্ষেত্রে আমরা রিটয়ারমেন্টের কথা ভাবি, কাজ থেকে বের হয়ে যাবার চিন্তা করি। তখন আমরা একটু বেশীই চিন্তিত হয়ে পড়ি। রিটয়ারমেন্টে যাবার পর আমরা আমাদের আর্থিক নিরাপত্তার পাশাপাশি সুস্থ্য থাকতে চাই, বাঁচতে চাই।
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেল্থ ১২৫৪ রিটায়ার্ড ব্যক্তির উপর গবেষনা করে দেখে-তাদের ৭৫% মানুষ রিটয়ারমেন্টের পূর্বের জীবনকে ভাল বলেছেন। কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন কর্ম মানুষের জীবনকে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করে। কর্মহীন অবসরে কোন স্বাদ নেই। কাজ আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। রিটয়ারমেন্ট জীবন কখনোই পরিপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আজকে তোমাদের এই বিষয়টাই পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো। একটা নির্দিষ্ট বয়সে মানুষ রিটায়ার করে; কিন্তু ঐ বয়সে তার জীবনের ‘ফুল প্যাকেজ ’ সম্পন্ন নাও হতে পারে। জীবনে এমন কিছু কাজ থাকে যা চাকুরীকালীন সময়ে করা সম্ভব হয় না। চাকুরীর কাজ হলো এক ধরনের দাসতে¦র কাজ। অনেক সময় পূর্ণ শক্তি বা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যায় না। রিটয়ারমেন্টে সেই সুযোগ এসে যায়।
অপরদিকে, চাকুরীকালীন সময়ে কেউ কেউ কাজকে ভালবাসতে পারে না। খুবই কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করতে থাকে, আর প্রতিনিয়ত হিসাব কষতে থাকে-চাকুরী শেষে কত মিলবে? কি›তু, জীবন চক্রে পৃথিবীতে রেখে যাবার জন্য কিছুই করা হয়ে উঠেনা। জীবনের ‘ফুল প্যাকেজ’ অধরায় থেকে যায়। পূর্ণ যাপীত জীবন-অথচ ‘আধ-পেট’ হয়ে থাকলো। এন্ড্রু বর্ন বলেন, “ আই থিংক দ্যা আইডিয়া অফ বিয়িং ইউজলেস ইজ রিয়েলি আওয়ার বিগেস্ট ফেয়ার। উই ওয়ান্ট টু এ্যাড ভ্যালু।” মানুষের যতো বয়স হবে-জীবন চক্রে তাকে ততো অবদান রেখেই বাঁচতে হবে। এমন কিছু বয়সি মানুষ আছে-যারা বৃদ্ধ বয়সে এসে সেলিব্রেটি হন। ভবিষ্যত বিনির্মাণ ভাবনায় মানুষকে পরিপূর্ন (হোলনেস) করে।
রোয়েনা বললো, “তাহলে তাদের করণীয় কী?” পিটার ড্রাকার এর উত্তর দিয়েছেন-“নেভার স্টপ ওয়ার্কিং।” তুমি অনায়াসে বলবে, ‘আমি অনেক আগে রিটায়ার করেছি-কিন্তু কাজ থেকে নয়। মিথ্যা আশায় আমি ভুলকে লক্ষ্য বস্তু বানাইনি। কারণ আমি পরিপূর্ণ মানুষ হতে চেয়েছি। আমি জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করছি। এর অর্থ হলো- ভবিষ্যতের জন্য কিছু রেখে যাবার জন্যই কাজ করি। জীবন মানে এই নয় যে, আমরা বৃদ্ধ হচ্ছি, আমরা অসু¯থ হচ্ছি এবং আমরা মারা যাচ্ছি। “ (ও ধিহঃ ঃড় ফরব, নঁঃ নবপধঁংব ও ধিহঃ ঃড় ষরাব) আমি মারা যাবো বলেই তো বাঁচার এতো চেষ্টা।
আম্মু, এটা চরম সত্য যে-পরিপূর্ণ জীবন কামনা বড়ই বিপদজনক। (এৎড়রিহম যিড়ষব রং ধ ৎরংশু নঁংরহবংং) (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী