জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি মিজানুর রহমানের (৫০) মরদেহ ফেরত দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার বেনীপুর সীমান্ত দিয়ে বিজিবির কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।
নিহত মিজানুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের নবী ছদ্দিনের ছেলে। তিনি জীবননগরের সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের আয়ুব আলীর জামাতা। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন তিনি।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর থানার নোনাগঞ্জ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হন মিজানুর রহমান। পরে মিজানুরের লাশ উদ্ধার করে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা। এর ৬দিন পর গতকাল বুধবার মিজানুরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, বেনীপুর বিওপির কমান্ডার আতিয়ার রহমান, জীবননগর থানার পরিদর্শক এসএম রায়হান, সৈকত পাড়ে, সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম মিল্টন ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, নিহত মিজানুরের স্ত্রী নাসিমা খাতুন এবং বিএসএফ ও কৃষ্ণনগর থানা পুলিশের সদস্যরা।
জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইশাবুল ইসলাম মিল্টন জানান, গত বৃহস্পতিবার মিজানুর ও তার সহযোগীরা ৪/৫ মানুষ নিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ফেরার সময় বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মিজানুর। এসময় তার সহযোগীরা পালিয়ে যান।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মিজানুরের স্ত্রী নাসিমা খাতুনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দাফনের জন্য নিজ বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার শেখপাড়া গ্রামে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বেনীপুর গ্রামের মধুর ছেলে বাদল (৪০), কাউছারের ছেলে ফারুক (৩৫) ও আরিফের ছেলে জীবন (৩৫) নামের তিনজন মিজানুর রহমানকে ভারতে ধুর (অবৈধ ভাবে মানুষ পারাপার) পার করার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। অন্যরা ফেরত আসলেও মিজানুর ফেরত না আসায় বাদলের মাধ্যমে তার ছোট স্ত্রী নাসিমা খাতুন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ফারুক ও মিজানুর ওই পারে (ভারত) আটকা আছে বের হতে পারেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অথবা রাতে তাকে বের করা হবে। শুক্রবার সকালে আবার যখন ফারুকের নিকট খোঁজ নিতে যায় তখন ফারুক মিজানুরের স্ত্রীকে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলে আজও আসতে পারিনি বিকালের মধ্যে ওকে আনা হবে। তখন ফারুকের স্ত্রীর মাধ্যমে ভারতে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে পারে সীমান্ত একজন মারা গেছেন। পরে ভারতের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে সে জানতে পারে মিজান বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে। পরবর্তীতে মৃতের ছবি সংগ্রহ করে মিজানুরের স্ত্রীকে দেখালে তিনি ছবিটি তার স্বামীর বলে নিশ্চিত করেন।