এক সন্ধ্যায়, একটা হলরূমে অনেক মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন বিখ্যাত একজন বক্তার বক্তব্য শোনার জন্য। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সবাই তার কথা শুনছেন। হঠাৎ বক্তা পকেট থেকে ১০০ ডলারের একটা নোট বের করে বললেন, এটা কার কার প্রয়োজন- হাত উঠান। আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, খুব বেশি মানুষ হাত উঠালেন না। মাত্র গুটি কয়েক মানুষ হাত উঠালেন। একটু চুপ থেকে বক্তা বললেন, ‘মঞ্চে এসে এই নোটটা নিয়ে যান’। এই কথা বলার সাথে সাথে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তা হলো না। মাত্র একজন মানুষ সিট থেকে উঠে গিয়ে নোটটা সংগ্রহ করলেন।
রোয়েনা বলে উঠলো, ‘‘তোমার কথা বলার বিষয়বস্তু ধরতে পারছি না। তাই মনোযোগে ঘাটতি হচ্ছে। প্লিজ, বিষয়টা আগে ক্লিয়ার করো, তারপর কথা বলো।’’ আমি বললাম, এখন কথা বলছি ‘টেকিং অ্যাকশন’ বা ‘কাজ শুরু’ করা বিষয় নিয়ে। গত সিজনে কথা হয়েছে ‘সুযোগ’ নিয়ে আর আজ কথা বলছি, সুযোগটাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়- সে বিষয়ে।
যাহোক হল রুমের সবাই তখন স্তব্ধ। ১০০ ডলার! সে তো কম কিছু না! তাহলে কেন তারা সিট থেকে উঠলেন না। এর পিছনে সাতটি কারণ থাকতে পারে। ১. আমি নির্লজ্জের মতো টাকাটা নিতে পারি না, আমার অতো প্রয়োজন নেই। ২. আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে, টাকাটা সত্যি সত্যি দিয়ে দেবে। ৩. আমি রুমের অনেক পিছনে বসেছিলাম। ৪. আমার চেয়ে অন্যের প্রয়োজন বেশি, তারা নিলে ভালই হয়। ৫. আমি অত লোভী নই। ৬. আমি সন্দিহান ছিলাম- এটা ভুল হচ্ছে কিনা এবং মানুষ আমাকে দেখে হাসবে কিনা। ৭. এরপর কি হয় তাই ভাবছিলাম।
মানুষের জীবনে অনেক সুযোগ আসে। তারা সেই সুযোগগুলোকে এভাবেই হারায়। একটা চিরন্তন সত্য বাণী হলো, ‘‘হাউ ইউ ডু এনিথিং ইজ হাউ ইউ ডু এভরিথিং।’’ অর্থাৎ তুমি একটা কাজ যেভাবে কর, বাকি সবগুলো কাজও একইভাবে কর। আরো সহজ করে বলা যায় এভাবে- ভাতের হাড়ির একটা ভাত টিপলেই বোঝা যায়, অন্যগুলোর কি অবস্থা! সফল ব্যক্তিরা সবসময় সুযোগ পেলেই সেটা কাজে লাগান। মরিস, বিখ্যাত এক কার্টুনিস্ট, যার আঁকা একটা কার্টুনের কথা তোমাদের না বলে পারছি না। ‘‘সাকসেস হল ১০% ইনসপাইরেশন, আর ৯০% গায়ের ঘাম’’ এই পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে কোট টাই পরা লোকটি আরেকজনকে ব্যঙ্গ করে বলছে, ‘‘চলো এখান থেকে যাই, এখানে দুর্গন্ধ’’। অ্যাকশন বা পরিশ্রমকে যদি ভালোবাসা না যায়- তাহলে সাফল্য সুদূর পরাহত। কিছু মানুষ সারাজীবন অপেক্ষায় থাকে একটা ভালো দিনের জন্য, যেদিন তারা কাজ শুরু করবে, তাদের জীবনে আর সে ভালো দিন আসে না। ‘পারফেক্ট ওয়েদার’ খুঁজতে খুঁজতে জীবন শেষ হয়ে যায়।
কাজ শুরু করার ফর্মুলা হলো- ‘রেডি, এইম, ফায়ার’। অর্থাৎ নিশ্চিত হয়ে কাজটা করা। মাঝে মাঝে দেখা যায়- ‘এইম’ করতে করতে সময় চলে যায়, ‘ফায়ার’ আর করা হয় না। একটা গল্প শোনো: একজন লেখক, খুব ভালো লেখেন। হঠাৎ তার ইচ্ছা হলো- ভাল একটা পত্রিকায় তার লেখা ছাপাবেন। তিনি তার একটা লেখা কপি করে, ডাকযোগে পত্রিকার সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দিলেন। কয়েকদিন পার হয়ে গেল, কিন্তু তার লেখা ছাপা হলো না। হঠাৎ একদিন তার কাছে ডাকযোগে একটা চিঠি আসলো, তাতে লেখা আছে যে- লেখাটা সঠিক ফরম্যাটে পাঠানো হয়নি, তোমাকে একটা ফরম্যাট দেয়া হলো, এটা অনুসরণ করে লেখা পাঠাও। তিনি সেটা অনুসরণ করলেন এবং লেখাটা ছাপা হয়ে গেল। এক্ষেত্রে কাজ শুরুর ফর্মুলা দাঁড়াল- ‘রেডি, ফায়ার, এইম’। সব সময় ‘রেডি-এইম-ফায়ার’ চলবে না।
‘নাথিং হ্যাপেন আনটিল ইউ টেক অ্যাকশন’ অর্থাৎ ‘কিছুই ঘটবে না যতোক্ষণ তুমি শুরু না করবে’ এ সম্পর্কে আরেকটা গল্প শোনো- এক ভদ্রলোক গীর্জায় গিয়ে প্রার্থনার মধ্যে ঈশ্বরের কাছে লটারীতে জয়ী হতে চাইলেন। লটারীর রেজাল্ট হলো। তিনি ব্যর্থ হয়ে আবার গীর্জায় গিয়ে একই প্রার্থনা করলেন। সেবারও ব্যর্থ হলেন। তৃতীয়বার গীর্জায় গিয়ে তিনি তার ঈশ্বরকে বললেন, ‘‘হে ঈশ্বর, আমি ভালো হয়ে গেছি, স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করছি, মদ ছেড়ে দিয়েছি, তুমি আমাকে লটারীতে জয়ী করে দাও।’’ হঠাৎ গীর্জার সমস্ত সাদা আলো জ্বলে উঠলো, একটা গায়েবী আওয়াজও শোনা গেল- ‘‘বোকা-গাধা, আগে লটারীর টিকিট ক্রয় করো, তারপর আমার কাছে এসো।’’ আমরা লটারীর টিকিট না কিনে লটারীতে জয়ী হতে চাই! গ্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী কমেডিয়ান, অভিনেতা, লেখক এবং চিত্রকর জনাথন ইউনটার্স ঠিকই বলেছেন, ‘‘যদি তোমার বন্দরে জাহাজ না ভেড়ে, তাহলে সাতরিয়ে জাহাজের কাছে পৌঁছাও।’’ রোয়েনা বললো, ‘‘তাহলে, সঠিক অ্যাকশনের মাধ্যমে স্যাটিসফেকশন আসে!’’ আমি বললাম, ‘একদম সঠিক’। পৃথিবীর সকল মানুষ স্যাটিসফেকশন চায়। কিন্তু কার্টুনিস্ট মরিসের মতো পরিসংখ্যানও বলছে, পৃথিবীর সবথেকে অপছন্দের বিষয় হলো ‘হার্ডওয়ার্ক’ বা ‘গায়ের ঘাম’। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী