মিজানুর রহমান:
সারি সারি ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শত শত পুরোনো মোটরসাইকেল। বিক্রেতারা তাদের মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পছন্দ হলেই চলছে দর-কষাকষি। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের নিকট পৌর বাস টার্মিনালের পুরোনো মোটরসাইকেল হাটের প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের দৃশ্য এটি। প্রতি হাটে অন্তত কোটি টাকার মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়। মাত্র ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল পাওয়া যায় এ হাটে।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার দুপুর থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমে উঠে পুরোনো মোটরসাইকেলের বিশাল এই হাট। কেনাবেচা চলে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমায় এই হাটে। এটিই হলো দেশের অন্যতম বৃহৎ পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ আশে পাশের কয়েকটি জেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে আসেন তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বিক্রি করতে এবং পছন্দের মোটরসাইকেলটি ক্রয় করার জন্য। এক যুগ ধরে চলে আসা এ হাটে কখনো কোনো বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে এ হাট আকৃষ্ট করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, বিভিন্ন মডেলের ৫০-১৫০ সিসির ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এই হাটে পাওয়া যায়। এই হাটকে কেন্দ্র করে পুরোনো মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল ক্রয় করে এই হাটে নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্যে। অনেকে তাদের নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি বিক্রয় করার জন্য অথবা বিক্রি করে অন্য মোটরসাইকেল কেনার উদ্দেশ্য নিয়েও আসেন।
হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৭০০-৮০০ টি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে প্রায় ১০০-১৫০ টি মোটরসাইকেল প্রতি সপ্তাহে বিক্রয় হয়। প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার মোটরসাইকেল এই হাটে বিক্রয় করা হয়। সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও অন্তত ২০০ জন স্থায়ী ব্যাপারি এই হাটে নিয়মিত আসেন।
জাহিদুল ইসলাম নামে ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ পুরোনো মোটরসাইকেলের ব্যবসা করি। আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। এত বড় পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট বাংলাদেশের কোথাও আমি দেখিনি। প্রতি হাটে আমি ৮-১০ টা মোটরসাইকেল নিয়ে আসি। এর মধ্যে ৫-৬ টা মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারি।’
রবিউল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই হাটে ক্রয় বিক্রয় সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখান থেকে মোটরসাইকেল কিনতে কোন ধরণের ঝুঁকি নেই। যে কোন ধরণের সমস্যা হাট কর্তৃপক্ষ তাদের নিজের দায়িত্বে সমাধান করে দেন। হাট কর্তৃপক্ষ মোটরসাইকেল এর কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে ক্রয় বিক্রয় করে থাকেন।’
ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর থেকে আসা ক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমি এই হাট থেকে আজ একটি বাজাজ পালসার মোটরসাইকেল কিনলাম। এর আগেও একদিন এসে দেখে গেছি। আজকে এসে পছন্দ হলো দাম দরে পছন্দ হলো নিয়ে নিলাম। হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিক্রয় রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝে নিলাম।’
মেহেরপুরের গাংনী থেকে আসা আরেক ক্রেতা বাবলুর রহমান বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। আজকে গাড়ির বাকি কাগজপত্র নেওয়ার তারিখ ছিলো। সেটা নিতে এসেছি এবং সাথে আরও কিছু বন্ধুরা এসেছে মোটরসাইকেল কেনার জন্য। এখানে অনেক ভালো ভালো মোটরসাইকেল তুলামূলক কম দামে পাওয়া যায়।’
আলমডাঙ্গার পুরোনো মোটরসাইকেল হাটের অন্যতম আয়োজক সাইফুর রহমান পিন্টু বলেন, এই হাটে প্রতি সপ্তাহে ৭০০/৮০০ মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে অন্তত ১০০ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়ে যায়। ক্রেতাদের সুবিধা তারা তুলনামূলক কম দামে দেখে শুনে মোটরসাইকেল কিনতে পারে। ক্রেতারা এবং বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে তার সব ব্যবস্থা আমরা করি। এতে ক্রেতা বিক্রেতা কারোরই কোনো সংশয় থাকে না।’
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ বলেন, ‘আলমডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গার বৃহত্তম একটি উপজেলা। এখানে কয়েকবছর ধরে পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট বসছে। আমার জানামতে এখানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭০০/৮০০ মোটরসাইকেল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আনা হয়। আমাদের ধারণা বাংলাদেশে যে সব পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট আছে এটি তাদের মধ্যে অন্যতম।’