নিজস্ব প্রতিবেদক:
আর কয়েক মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দলটি এখন নিজের সমর্থন ও ভোট বাড়ানোর কাজে সময় দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে বেশ কিছু সংগঠন গড়ে ওঠেছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর সুবিধাবাদী লোকেরা ‘আওয়ামী’ ও ‘লীগ’ ব্যবহার করে সংগঠন গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এসব সংগঠনের সংখ্যা এখন শতাধিক বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে সুবিধাবাদী এসব লোকেরা সংগঠন করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ওঠে। বিভিন্ন সময় এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সহযোগিতাও নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু সংগঠনকে কাছে টানার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘আওয়ামী ওলামা লীগ’ নামে এমন একটি সংগঠনের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ অংশ নেয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়। দলের দপ্তর সম্পাদক থাকাকালে এই আবদুস সোবহান গোলাপই ওলামা লীগ নামে কোনো সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এখন সেই ওলামা লীগের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অংশ নেয়ার পর ‘সমমনা সংগঠনগুলোর প্রতি আওয়ামী লীগ যে নমনীয়’ তা স্পষ্ট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি নিয়ে নমনীয় মনোভাবে রয়েছেন। সমর্থক সংগঠন বা সমমনা সংগঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। এদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওলামা লীগের সংগঠনে গোলাপই (আবদুস সোবহান গোলাপ) হয়তো সাধারণ সম্পাদককে (ওবায়দুল কাদের) নিয়ে গেছেন। দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তার জানা নেই। তিনি বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক হয়তো কোনো উদ্যোগ নিয়ে থাকতে পারেন।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই ভালো বলতে পারবেন।’ বিচ্ছিন্নভাবে এ বিষয়ে তিনি এর চাইতে বেশি কিছু বলতে চাননি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্রে দেয়া স্বীকৃতির বাইরে যেসব সমমনা সংগঠন আছে তাদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ মেনে কার্যক্রম চালায় তাদের প্রতি তো ইতিবাচক মনোভাব থাকতেই পারে। এতে তো দোষের কিছু নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইতিবাচক থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো সমমনা সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দোষের কিছু নেই। এতে সংগঠনের গঠনতন্ত্রে নিষেধাজ্ঞাও নেই।’
জানা গেছে, নামের সঙ্গে ‘আওয়ামী ও লীগ’ ব্যবহার করে এখন শতাধিক সংগঠন মাঠে রয়েছে। অথচ গঠনতন্ত্রে স্বীকৃতি পাওয়া সহযোগী সংগঠনের বাইরে মাত্র ১৭টি সংগঠনের স্বীকৃতি আছে। বাকিরা সবাই যে যার মতো করে চলছে। তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এই ১৭টি সংগঠনকে অনুমোদন দেয়। জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িটি ট্রাস্টের নামে লিখে দেন। ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ট্রাস্টের নীতিমালায় বলা হয়— বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সামাজিক-সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও দাতব্য কোনো সংগঠন গড়ে তুলতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ট্রাস্ট গঠনের দুই বছর পর ১৯৯৬ প্রথমে বঙ্গবন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের নামে সংগঠন অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৭টি সংগঠনকে অনুমোদন দেয় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ২০১৫ সালের পর আর কোনো সংগঠন ট্রাস্টের অনুমোদন পায়নি।
ট্রাস্টের অনুমোদিত সংগঠনগুলো হলো : বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ (সেগুনবাগিচা), বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ (ধানমন্ডি), মুজিব সেনা পরিষদ (বনানী), বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ (ধানমন্ডি), বঙ্গবন্ধু শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ (ঝিগাতলা), বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন (আমেরিকা), বঙ্গবন্ধু শিশু অ্যাকাডেমি (খিলগাঁও), শেখ রাসেল মেমোরিয়াল সমাজকল্যাণ সংস্থা (রামপুরা), বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন (পল্টন), বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র (রায়েরবাগ), শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগার (পিরোজপুর), বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা মঞ্চ (ফরিদপুর) ও শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি সমাজকল্যাণ পাঠাগার (বরগুনা)। এই ১৭টি সংগঠনের বাইরে ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ’কে স্বীকৃতি দেয় আওয়ামী লীগ। এদিকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫(২) ধারা অনুযায়ী আটটি সহযোগী সংগঠন হয়েছে। এগুলো হলো মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। এর বাইরে ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ নিজ নিজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে বলে গঠনতন্ত্রে স্বীকৃতি রয়েছে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে স্বীকৃতি না থাকলেও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও মহিলা শ্রমিক লীগকে দলটি সম্মান করে। ফলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম মিলে আওয়ামী লীগের স্বীকৃত ১২টি সংগঠন রয়েছে।
স্বীকৃতি নেই এমন সংগঠনগুলো হলো ১. বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ; ২. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ; ৩. আওয়ামী প্রচার লীগ; ৪. আওয়ামী সমবায় লীগ; ৫. আওয়ামী তৃণমূল লীগ; ৬. আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ; ৭. আওয়ামী মোটরচালক লীগ; ৮. আওয়ামী তরুণ লীগ; ৯. আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ; ১০. আওয়ামী যুব হকার্স লীগ; ১১. আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ; ১২. আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ; ১৩. আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ; ১৪. আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ; ১৫. আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ; ১৬. আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট; ১৭. জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ; ১৮. বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ; ১৯. বঙ্গবন্ধু একাডেমি; ২০. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ; ২১ ওলামা লীগ; ২২. বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ; ২৩. বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ; ২৪. বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ; ২৫. বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ; ২৬. জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ; ২৭. বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ; ২৮. বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন; ২৯. বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ; ৩০. বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ; ৩১. বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ; ৩২. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ; ৩৩. বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ; ৩৪. বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ; ৩৫. বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ; ৩৬. আমরা মুজিব সেনা; ৩৭. আমরা মুজিব হব; ৩৮. চেতনায় মুজিব; ৩৯. বঙ্গবন্ধুর সৈনিক লীগ; ৪০. মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ; ৪১. নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী; ৪২. দেশীয় চিকিৎসক লীগ; ৪৩. ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ; ৪৪. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ; ৪৫. নৌকার নতুন প্রজন্ম; ৪৬. ডিজিটাল ছাত্রলীগ; ৪৭. ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ; ৪৮. ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ; ৪৯. বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ; ৫০. ঠিকানা বাংলাদেশ; ৫১. জনতার প্রত্যাশা; ৫২. রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি; ৫৩. জননেত্রী পরিষদ; ৫৪. দেশরত্ন পরিষদ; ৫৫. বঙ্গমাতা পরিষদ; ৫৬. বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ; ৫৭. আমরা নৌকার প্রজন্ম; ৫৮. আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট; ৫৯. তৃণমূল লীগ; ৬০. একুশে আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি; ৬১. আওয়ামী প্রচার লীগ; ৬২. সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ; ৬৩. বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি লীগ; ৬৪. আওয়ামী শিশু লীগ; ৬৫. আওয়ামী তৃণমূল লীগ; ৬৬. আওয়ামী তরুণ প্রজন্ম লীগ; ৬৭. আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ; ৬৮. বাংলাদেশ জনসেবা লীগ; ৬৯. আওয়ামী শিশু-কিশোর লীগ; ৭০ অভিভাবক লীগ; ৭১ উদ্যোক্তা লীগ; ৭২. আওয়ামী অনলাইন লীগ ও ৭৩. বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ।