‘মোখা’ নামক দৈত্যটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে যাবে, নাকি মিয়ানমারের উপর দিয়ে যাবে- তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে মিডিয়ার পাশাপাশি এদেশের মানুষও আলোচনায় মত্ত। শেষমেষ ‘মোখা’ অনেকটা স্বস্তি দিয়ে বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে গেল। জনজীবনে স্বস্তি এসেছে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। এই বিষয় নিয়ে রোয়েনা ও অরোনার সাথে কথা চলছিল। হঠাৎ করেই রোয়েনা বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট নিয়ে কথা বলা শুরু করলো। আমি বললাম, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। জলবায়ু সংকট সৃষ্টিকারী দেশগুলো কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে সভা সেমিনার করবে, কিন্তু বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ নেবে না। শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে জলবায়ু সংকট তৈরি, কিন্তু শিল্পজাত প্রোডাক্টই হলো তাদের আয়ের প্রধান উৎস। মেয়েটা বললো, ‘‘তাহলে কি এর সমাধান নেই?’’ আমি বললাম, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)’ এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আন্তর্জাতিক এক সম্মেলন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রনে মশাকে নিয়ে মিটিং করা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘১০০ টা ট্যানারি সৃষ্টি করতে পারবেন, কিন্তু একটা ধলেশ্বরী তৈরি করতে পারবেন না।’’ যাইহোক এ সকল বিষয় নিয়ে পরে কথা বলা যাবে- আজ তোমাদেরকে অন্য একটি বিষয়ে বলবো।
আজ তোমাদের ‘জীবনে সুযোগকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়’ সে বিষয়ে বলবো। টেনিস তারকা ভেনাস উইলিয়ামস বলেন, ‘‘তুমি তোমার উপর বিশ্বাস রাখ যা কেউ করে না। এই আত্মবিশ্বাসই তোমাকে জয়ী করবে।’’ ডব্লিউ ক্লেমেন্ট ষ্টোন বলেন, ‘‘যখন হাতের মুঠোই লেবু পাবে, চাপ দাও এবং শরবত বানিয়ে নাও।’’ জীবনে সুযোগ আসবেই। সেই সুযোগকে কখনো হাতছাড়া করা যাবে না। সুযোগের সদ্বব্যবহারের চরম শত্রু হলো অন্যরা কি ভাববে- এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়া। আসলে মানুষ নিজেদেরকে নিয়েই বেশি ভাবে। তোমার আইডিয়া, লক্ষ্য, পোশাক, চুল এসব নিয়ে কারো ভাববার এতটুকু সময় নেই। শুধু শুধু তুমি এসব নিয়ে বিরক্ত। ডঃ ড্যানিয়েল আমেনের ১৮/৪০/৬০ সূত্রটি এর চমৎকার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে। যখন তোমার বয়স ১৮, তখন তুমি মনে কর প্রত্যেকেই তোমাকে নিয়ে ভাবছে। যখন তোমার বয়স ৪০, তখন অন্যরা তোমাকে নিয়ে কি ভাবছে তা তুমি এড়িয়ে চলতে পারবে। আর যখন তোমার বয়স ৬০ হবে, তখন তুমি নিশ্চিত হয়ে যাবে যে কেউ তোমাকে নিয়ে এতোটুকু ভাবছে না।
এবার তোমাদের একটি গল্প বলিঃ ক্যাপ্টেন জেরী কফি নামীয় একজন আমেরিকান পাইলট ভিয়েতনাম যুদ্ধে শত্রুর হাতে ধরা পড়ে ৭ বছর জেলে ছিলেন। যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্ত হলে সাংবাদিকরা তাকে বন্দীকালীন অভিজ্ঞতার কথা জানতে চান। উত্তরে ক্যাপ্টেন জেরী কফি ভিয়েতনামের বন্দী জীবনের কথা চেপে গিয়ে বলেন যে, সেটা ছিল তার জীবনকে নতুন রূপে রূপান্তরের একটা সময়। তিনি জানতেন যে, তিনি সহজে মুক্তি পাবেন না। কাজেই মুক্তির চিন্তা বাদ দিয়ে জীবনকে নতুন রূপে গড়ার সুযোগটা কাজে লাগান। তিনি স্রষ্ঠাকে চেনা এবং জানার চেষ্টা শুরু করেন। কারাগারের ঐ কক্ষে শুধু দ’ুজন থাকতো, একজন ক্যাপ্টেন কফি ও তার স্রষ্টা। সেখানে জীবনে তিনি কি কি করেছেন তার হিসাব কষা শুরু করেন। মানবতা কে গভীরভাবে উপলব্ধির চেষ্টা চালিয়ে যান। এভাবে তিনি জ্ঞানে, মানবতায় ও প্রশান্তিতে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি কখনো বন্দী জীবন নিয়ে ব্যবসা করেননি, বরং নিজেকে গভীর আধ্যাত্মিক ও সুখী মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এ বিষয়ে তিনি বিখ্যাত বক্তা বনে যান।
সুযোগ কাজে লাগানোর অন্তরায় নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে জ্যাক কানফিল্ড এর ‘হাউ টু গেট ফ্রম হয়ার, ইউ আর টু হয়ার ইউ ওয়ান্ট টু বি’ বইয়ে বলেন যে, বিবেচনা (কনসিডারেশন), ভয় (ফেয়ার) ও পথরোধ (রোডব্লক) প্রাপ্য বা সম্ভাব্য সুযোগকে কাজে লাগাতে বাধার সৃষ্টি করে। তিনি আরো বলেন যে, যখন এই তিনটা হাজির হয়, তখন মানুষ এদেরকে ‘স্টপ সাইন’ বলে মনে করে।
মানুষ এই তিনটিকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে এবং ভিতরে ভিতরে ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরি করে। ওয়ান মিনিট মিলিয়নিয়ার বইয়ের লেখক রবার্ট এ্যালেন বলেন, ‘‘তুমি যা চাও, তার সব কিছুই কমফোর্ট জোনের বাইরে।’’ মূলত: কমফোর্ট জোন যে কোন মানুষের জন্য কারাগার স্বরূপ। তুমি যেমন কখনোই ‘গ’ কে ‘ক’ এর আগে চিন্তা করতে পারো না, তেমনি এগুলোকে না ডিঙ্গিয়ে সুযোগের সদ্বব্যবহার করে সাফল্যের কুল ধরতে পারবে না।
আযীম জামাল নামীয় একজন কানাডিয়ান স্পিকার ‘দ্যা আওয়ার অফ পাওয়ার’ (শক্তিশালী একটি ঘন্টা) সম্পর্কে বলেন, ২০ মিনিট কাটবে মনের মধ্যে ছবি একে ও মেডিটেশন (ধ্যান) করে, ২০ মিনিট কাটবে ব্যায়াম করে এবং ২০ মিনিট কাটাবে মোটিভেশনাল ও তথ্যবহুল বই পড়ে। এভাবে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে সময় কাটাবে। তাহলে তোমাদের মধ্যে বৈদ্যুতিক শক্তির মতো শক্তি আসবে।
দুই মেয়ে মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনছিল। এই দেখে আমি বললাম, ‘‘তোমরা আজ থেকেই এই ম্যাজিক্যাল আওয়ারের প্রক্রিয়া যদি শুরু করো- তাহলে দেখবে তোমার আগামীকাল কত না সুন্দর হয়! (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী