নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস করে- এমন কিছু লোকের কারণে ইসলাম নিন্দিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আসলে যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেন, তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করছেন, তারা সব ধর্মেই আছেন। গতকাল শুক্রবার হজ কর্মসূচি-২০২৩ (১৪৪৪ হিজরি) উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর আশকোনা এলাকার হাজী ক্যাম্পে এ অনুষ্ঠান হয়। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এটি সর্বদা মানুষের কল্যাণের ধর্ম, যা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। হজ কর্মসূচির উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের জনগণের জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী। হজযাত্রী ও দেশের আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আমাদের শিশুরা এটি থেকে দূরে থাকতে পারে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত হতে পারে।’ প্রথম হজ ফ্লাইট আজ শনিবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ২২১ হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন। কভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন। কভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কেউ মনে করে যে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবে, তা কখনই হবে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা বলেননি এবং আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) তা বলেননি। আমাদের ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম।’ তিনি বলেন, এ জঘন্য কাজটি থেকে এই লোকদের থামাতে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের (হজযাত্রীদের) কাছে আমার সবচেয়ে বড় দাবি হলো, আপনারা আমার বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন, যাতে তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কোনো দুর্যোগ বা সংকট, তা মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের যাতে ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটে। কারণ এখানে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং পরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। তিনি হজযাত্রীদের দোয়া করতে বলেন, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বর্তমান অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু সৌদি বাদশাহর কাছে অনুরোধ করেছিলেন যাতে আমাদের দেশের মানুষ হজে যেতে পারেন। সৌদির বাদশাহও সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অল্প খরচে হজে পাঠানোর ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছিলেন। ৭৫ এর পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই জাহাজকে প্রমোদতরীতে পরিণত করে। তখন হজযাত্রা হতো না, এটা দুঃখজনক। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ বাংলাদেশকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে দেশের মানুষ অন্তত খাবার খেতে পারছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি।’ হজের সময় হাজিদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আল্লাহর মেহমান হিসেবে আল্লাহর ঘরের পাশাপাশি মক্কা-মদিনা শরিফে যাচ্ছেন। আমরা প্রার্থনা করি যেন আপনারা নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারেন এবং সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন।’ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুলাইহান ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম।