আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানে সাসপেন্স। নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। কি হতে যাচ্ছে দেশটিতে! ইমরান খানকে কি আবার গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে সরকার! সেনাবাহিনী কি ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে? লন্ডন সমীকরণ কি বলছে? ইত্যাকার আলোচনা মুখে মুখে। কমপক্ষে তিন দিন হলো লাহোরে জামান পার্কে ইমরান খানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। চারদিক অবরুদ্ধ। এমন কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য থেকে ইমরান খান একের পর এক টুইট করে চলেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, তাকে আরও একবার গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সেনাবাহিনী কঠোর বার্তা দিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাবধান করেছেন। বলেছেন, আর কোনো সহিংসতা সহ্য করা হবে না। পাকিস্তানের রাজনীতি কেমন যেন গোলমেলে হয়ে গেছে। একদিকে সরকার। অন্যদিকে ইমরান খান। মাঝখানে বিচারবিভাগ, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী। সবকিছু একসঙ্গে মিলে এক উদ্ভট পরিস্থিতি। পাঞ্জাব প্রদেশ সরকার আল্টিমেটাম দিয়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার বাসভবনে থাকা ‘সন্ত্রাসীদের’ ধরিয়ে দিতে। সেই সময় পেরিয়ে গেছে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল দুটায়। এরপর ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যেকোনো সময় অভিযান চালানো হবে বলে পাকিস্তানি মিডিয়া খবর দিতে থাকে। বিষয়টা যেন যুদ্ধের ময়দানের মতো। কি হচ্ছে, কি হবে, আগেভাগে বলা যায় না। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যাচ্ছেও তাই। পাঞ্জাব সরকার বলেছে, তারা ইতিবাচক পরিবেশে ইমরানের বাড়িতে সার্স অপারেশন চালাবে। প্রদেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী আমির মীর বৃহস্পতিবার বলেছেন, আইনপ্রয়োগকারীরা পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বাসভবনে জুমার নামাজের পর তার অনুমতি সাপেক্ষে ‘সন্ত্রাসীদের’ ধরতে ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অভিযান চালাবে। এতে তত্ত্বাবধান করবেন লাহোরের কমিশনার। তবে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়নি। লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে জামান পার্কের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সার্স ওয়ারেন্ট পেয়েছে। পুলিশের নারী সদস্যরাও থাকবে তাদের তল্লাশিতে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য, ওই বাড়িতে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা। এর আগে ইমরান খান আইন প্রয়োগকারীদের অনুরোধ করেছেন তার বাসায় সার্স অপারেশন চালাতে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে বৈধ সার্স ওয়ারেন্ট। মন্ত্রী আমির মীর বলেন, যদি ইমরান খান তল্লাশির অনুমতি না দেন, তাহলে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করবো। এদিকে শুক্রবারও ইমরান খানের বাড়ি থেকে পালানোর সময় ৬ ‘সন্ত্রাসীকে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। লাহোর ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার (সিসিপিও) বিলাল সিদ্দিক কামিয়ানা এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত চার জন সন্ত্রাসী আসকারি টাওয়ালে হামলায় জড়িত ছিল এবং আর দুই জন লাহোরে কর্পস কমান্ডার হাউসে ভাঙচুর চালিয়েছে। এর আগেরদিন পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী আমির মির জানান, জামান পার্ক অঞ্চল থেকে পালানোর সময় আটজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আটক সন্ত্রাসীদের ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তারা গত ৯ই মে লাহোরে কর্পস কমান্ডার হাউসে হামলায় জড়িত ছিলেন। ওদিকে ইমরান খান অন্যরকম এক ভয় করছেন। তিনি মনে করছেন আগে কিছু লোককে তার বাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে পারেনি বলে পুলিশ অভিযান চালায়নি। তারা চেয়েছে কিছু লোককে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে পরে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখাতে। আর মন্ত্রী এখন বলছেন সবই করা হবে ক্যামেরার উপস্থিতিতে। তার এমন দাবিকে কৌতুক হিসেবে অভিহিত করেছেন মন্ত্রী আমির মীর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই মন্ত্রী আরও জানান, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তারা তাকে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করতে বলেছেন। এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণার জন্য তাকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।
গ্রেপ্তার সিন্ধু প্রদেশের সাবেক গভর্নর : পিটিআই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিন্ধু প্রদেশের সাবেক গভর্নর ইমরান ইসমাইলকে। পিটিআই’র টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে তার গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে। যদিও কখন কীভাবে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসমাইল তার বিস্তারিত জানানো হয়নি। টুইটারে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘ফ্যাসিবাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছে ইমরান খানের দলটি। এটি পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক বলেও উল্লেখ করা হয় ওই টুইট বার্তায়।
গ্রেপ্তারের পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: ইমরান খান
গত ৯ই মে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার গ্রেপ্তারের দিনই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা ও সহিংসতা। এতে টার্গেট করা হয় সামরিক বাহিনীকে। ওই ঘটনার পরই ইমরানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর আকাশ-পাতাল দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইমরান খান শুক্রবার জানান যে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ‘নো ডায়ালগ’ পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। ইমরান খান বলেন, বর্তমান সেনাপ্রধানের নিশ্চিতভাবেই আমাকে নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। গত এক বছর ধরে আমার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চলছে। এএফপি’র কাছে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন যে, সাবেক সেনাপ্রধানের চক্রান্তের কারণেই আমাকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল।