নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পূর্বাশা পরিবহনের একটি নৈশকোচ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে উল্টে গেছে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন বাসের সুপারভাইজার সাগর হোসেন (২৫)। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌঁনে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বদরগঞ্জবাজারের অদূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সাগর হোসেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর শহরের ইসলাম পাড়ার তাহসান ইসলাম বাবু কসাইয়ের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলার গোকুলখালী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে আল আমিন (২৪), একই এলাকার মৃত সেলিমের ছেলে আলিম (২৪), চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ার আকসেদ আলীর ছেলে গোলাম আজম পিনা (৬২), একই এলাকার মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে শাহাবুল ইসলাম (৬৫), সুমিরদিয়ার নীলার মোড় এলাকার কটার মেয়ে মেহেরুন (৬২), দর্শনা কেরুজ পাড়ার মিনারুলের ছেলে তারেক (২১), একই এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে নাহিদ ফেরদৌস (৩৫), দামুড়হুদার জয়রামপুরের ফরজ আলীর ছেলে মিরাজ (১৯) ও জীবনগগরের বদিনাথপুরের জিদার হোসেনের ছেলে শরিফুলসহ (৩৩) অন্তত ১৫ জন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় পূর্বাশা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫২৪২) একটি নৈশকোচ। যাত্রীবাহী বাসটি চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ বাজার পার হলেই রাস্তার উপর পড়ে থাকা পিচ্ছিল কাদায় স্লিপ করে নিয়ন্ত্রণ হারায়। রাস্তা থেকে ছিটকে ডান পাশের একটি খাদে পড়ে যায় কোচটি। তিনবার ডিগবাজি খেয়ে উল্টে যায় বাস। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সুপারভাইজার সাগর হোসেন। আহত হন বাসের অধিকাংশ যাত্রী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। আহতদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও ঝিনাহদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহত এক যাত্রী গোলাম আজম পিনা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমানা পার হয়ে ঝিনাইদহ অংশে প্রবেশের সময়ই এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তায় কাদামাটি ছিল, এজন্য গাড়ির চাকা নিচে নেমে পড়ে। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারায় বাসের চালক। বাসের ধাক্কায় বাসের সড়েকর পাশের কয়েকটি গাছও ভেঙে যায়। কয়েকবার চেষ্টার পরও নিয়ন্ত্রণে না আসায় খাদে পড়ে তিনবার ডিগবাজি মারে গাড়িটি। আমরা বাসের ডান পাশের সিটে ছিলাম, তাই সহজেই বেরিয়ে আসতে পেরেছি।
আরেক আহত যাত্রী আল আমিন হোসেন বলেন, আমাদের পূর্বাশা পরিবহনের সামনে রয়েল এক্সপ্রেসের একটি বাস ছিল। সামনের বাসটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলে কাদায় স্লিপ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় পূর্বাশা পরিবহনের গাড়িটি।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জানান, দুর্ঘটনায় ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী গুরুতর আহত ও একজন বাসের সুপারভাইজার নিহতের খবর পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে নিয়োজিত আছে।
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করি। একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ৯জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাসের ভিতর থেকে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাসটি উল্টে পড়ে আছে। উদ্ধারে কাজ চলছে।
এদিকে গতরাত ২ টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছিল বলে জানা গেছে।