আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাইরের দেশে কফ সিরাপ পাঠানোর আগে তা সরকারি ল্যাবরেটরিগুলোতে পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন (সিডিএসও)। গত বছর গাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানে ভারতীয় কফ সিরাপ সেবনের পর শতাধিক শিশুর মৃত্যুর জেরেই এই প্রস্তাব দিয়েছে সিডিএসও। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দিয়েছে সিডিএসও।
রয়টার্সকে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশজুড়ে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারচালিত বেশ কিছু পরীক্ষাগার বা ল্যাবরেটরি আছে। আমরা সরকারকে বলেছি— কফ সিরাপ রপ্তানির আগে এগুলো যেন সেসব পরীক্ষাগারে যেন সিরাপ পরীক্ষা করানো হয় এবং যে কোনো কফ সিরাপ রপ্তানির ক্ষেত্রে এসব পরীক্ষাগারের ছাড়পত্রের সনদ যেন বাধ্যতামূলক করা হয়।’
এ ব্যাপারে আরও বিশদ তথ্য জানতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, তবে কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ ওষুধ রপ্তানির জন্য ভারত ইতোমধ্যে ‘বিশ্বের ফার্মেসি’ নামে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশটির ওষুধ শিল্পের ভলিউম ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তবে বিশাল আকারের এই শিল্পকে গত বছর ধাক্কা দিয়ে যায় গাম্বিয়া ও উজবেকিস্তানের শিশুদের মৃত্যু। কিডনি জটিলতায় ভুগে ২০২২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় অন্তত ৭০ জন এবং মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে ১৯ শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত এই শিশুদের নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, এরা সবাই ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভারতীয় কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস ও ম্যারিয়ন বায়োটেকের তৈরি কফ সিরাপ সেবন করেছিল এবং সিরাপে থাকা দুষিত পদার্থের বিষক্রিয়াতেই তাদের কিডনি বিকল হয়েছে।
গাম্বিয়ার শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত কফ সিরাপ, আর উজবেকিস্তানে শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে ম্যারিয়ন বায়োটেকের তৈরি সিরাপ সেবন করে। পরে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরীক্ষায় দুই কোম্পানির কফ সিরাপে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে এথিলিন গ্লাইকোল এবং ডায়াথিলিন গ্লাইকোল নামের দু’টি রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই দু’টি রাসায়নিক তেমন ক্ষতিকর না হলেও শিশুদের জন্য এগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারা বলেন, মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ম্যারিয়ন বায়োটেকের সিরাপে পরিমাণ এথিলিন গ্লাইকোল ও ডায়ালিথিন গ্লাইকোলের উপস্থিতি তারা দেখেছেন, এই পরিমাণ রাসায়নিক কোনো পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রবেশ করানো হলে তিনিও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরবেন। মেইডেন এবং ম্যারিয়ন অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই দুটি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন ও বিপননসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গত বছরই।