নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের প্রার্থী নেই। তারা অনেকটা নীরব। স্থানীয় নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ একাই রয়েছে ভোটের মাঠে। অনেকটা নির্ভার দলটি ডাকেনি শরিকদের। শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতারা দু-এক জায়গায় কাউন্সিলর পদে প্রার্থী
হতে পারেন। তিনটি সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে করলেও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের জোটে নেই। বিএনপিবিহীন সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ আনার চেষ্টা করছে জাপা। এদিকে পাঁচ সিটিতেই মেয়র পদে প্রার্থী দিচ্ছে চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটি বরিশালে জয়ের আশা করছে।
আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা সমকালকে বলেছেন, বিএনপিবিহীন মাঠে আওয়ামী লীগ ভোটের প্রচারে তাদের ডাকছে না।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। সেখানে আওয়ামী লীগ, জাপা এবং ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ভোটের দৌড়ে রয়েছেন। বাকি ছয় প্রার্থীর একজন জাকের পার্টির, আরেকজন গণফ্রন্টের, অন্যরা স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা, আরেকজন আওয়ামী লীগেরই নেতা। বাকি দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন বিএনপি নেতার ছেলে।
১৪ দলে আওয়ামী লীগের শরিকদের কেউ গাজীপুরে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। আওয়ামী লীগের বৃহত্তর জোট মহাজোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপির দাবি, তাঁর দলের শক্তিশালী মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তিনি সমকালকে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের অনুরোধে প্রার্থী দেয়নি তরীকত। নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে ভোটের প্রচারে থাকবেন তাঁরা।
তরীকত ছাড়াও সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা ও জেপির। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সমকালকে বলেছেন, মেয়র পদে কোথাও প্রার্থী দেবেন না। কাউন্সিলর পদে জাসদ নেতারা প্রার্থী হবেন কিনা– এ বিষয়ে আগামী ৮ মে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এককভাবে অংশ নেওয়ায় নৌকার প্রচারে জাসদ থাকবে কিনা– এ প্রশ্নে ইনু বলেছেন, এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে স্থায়ী কমিটিতে।
খুলনা ও বরিশালে ভোট ১২ জুন। এ দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৬ মে পর্যন্ত। রাজশাহী ও সিলেটে ভোট ২১ জুন। এ দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে ২৩ মে পর্যন্ত। চার সিটিতেই আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। শরিকদের মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে একমাত্র রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা জয়ী হয়েছিলেন। এবারও সেখানে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিতে পারে দলটি।
বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে, সিটি নির্বাচন নিয়ে বরিশালে আওয়ামী লীগে বিরোধের প্রভাব শরিক দলেও পড়েছে। বরিশালে সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ন্যাপের। দল তিনটি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) নির্বাচনে যুক্ত হয়নি।
তিনটি দলের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের নিজস্ব প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগে যে দ্বন্দ্ব চলছে, শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গড়ায় তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাছাড়া ১৪ দলের জেলা সমন্বয় কমিটি থাকলেও মহানগরে নেই। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি ছাড়া আওয়ামী লীগও শরিকদের ডাকে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নীলু এবং জাসদের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই মাহবুব সমকালকে বলেন, গত ২৮ এপ্রিল নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খোকন সেরনিয়াবাত আমন্ত্রণ জানালেও যেতে পারেননি। তবে ন্যাপের সভাপতি দাসগুপ্ত আশীষ কুমার জানিয়েছেন, তাঁরা আমন্ত্রণ পাননি।
মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। সাদিক আবদুল্লাহ প্রকাশ্যে সমর্থনের কথা জানালেও আওয়ামী লীগে বিরোধ চরমে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নীলু বলেন, আওয়ামী লীগের বিরোধ মিটলে জেলা কমিটির সভা করে নৌকার প্রচারে নামার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। একই কথা বলেছেন জাসদের জেলা সভাপতি।
বিএনপিবিহীন ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রার্থী দেওয়ার গুঞ্জন উড়িয়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, পাঁচ সিটিতেই লাঙ্গলের প্রার্থীরা জয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়বে। কিন্তু ভোটাররা প্রশ্ন করছে– ‘আমরা ভোট দিতে পারব? আমরা ভোট দিলে তা গণনা হবে? নাকি আওয়ামী লীগ নিজের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে?’ তিনি বলেন, এটাই হলো বাস্তবতা।
জাপা চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনায় মুখর হলেও খুলনায় লাঙ্গলের প্রার্থী হতে যাওয়া শফিকুল ইসলাম মধু দলের মনোনয়ন পেয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধি জিয়ারত করেছেন। খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, এ নিয়ে দলটির নেতারাই প্রশ্ন তুলেছেন।
খুলনা মহানগর জাপার সাবেক সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এরশাদের কবর জিয়ারত না করে আওয়ামী দালালি করে খুলনায় ফলাফল নেই।’ সাবেক সদস্য সচিব এস এম মাসুদুর রহমান ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এদের হাত থেকে লাঙ্গল বাঁচান, পল্লীবন্ধুর দলকে বাঁচান। মনোনয়ন নিয়ে খুলনায় আসার আগেই…।’ তবে জাপার অনেকেই লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে আপত্তি কীসের।
শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নন, ১৮ কোটি মানুষের। সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারের উচিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।