আমার অনুজ-প্রতীম সুহৃদ ডাক্তার সাজেদ বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলে এম এস কোর্স করছেন। প্রথম পরিচয়-আমার চাকরির পূর্বের স্টেশনে। সেখানে তিনি মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন ডাক্তার একসঙ্গে জয়েন করলো। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ছিলেন আমার ক্লাসমেট। গতকাল ডাঃ সাজেদের সঙ্গে দেখা। বললাম, ‘‘সাজেদ, তুমি কি আমার লেখা নিয়মিত পড়ছো?’’ ডাঃ সাজেদ বললো, ‘‘হ্যাঁ, ভাইয়া, নিয়মিত পড়ছি। আপনার প্রতিটা লেখার মধ্যে ম্যাসেজ পাই। আমাদের ডাক্তারদের জন্য লেখাগুলো উপকারী।’’ আমি বললাম, ‘‘৩৩ টা লেখা ছাপা হয়ে গেছে। একঘেয়েমী লাগছে না তো?’’ একথার উত্তরে সাজেদ যা বললো, তা শুনে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত। সাজেদ বললো, ‘‘আল্লাহ তায়ালা ভূ-পৃষ্ঠে পানি দেন বৃষ্টির মাধ্যমে। সকল স্থানের ভূ-পৃষ্ঠের গঠন আবার এক রকম নয়। মাটির গুনাগুনের কারণে কোথাও পানি জমে, কোথাও সঙ্গে সঙ্গে পানি বিলীন হয়ে যায়। যতক্ষণ খারাপ কিছু করছেন না ততক্ষণ কে বুঝলো, কে বুঝলো না, একঘেয়েমী হচ্ছে কিনা- এসব নিয়ে না ভেবে কাজটি চালিয়ে যান।’’ আমি বললাম, ‘‘কিন্তু, পণ্য বা সেবা সৃষ্টি চাহিদা অনুযায়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়।’’
রোয়েনা বললো, ‘ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা নিশ্চয়ই আছে। একজন অন্যজনের প্রতিযোগী। এক্ষেত্রে তাদের মাঝে শত্রুতা তৈরি হয় কিনা? বা সে সম্পর্কের ধরনের সীমারেখা কেমন হওয়া উচিত?’ আমি বলতে শুরু করলাম, ‘‘তুমি মনে হয় ভারতের ‘ক্যাম্পা কোলা’ ৫০ বছর পর বাজারে আসার খবরটা দেখেছ।’’ ক্যাম্পা কোলা একসময় ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় ছিল। সুপারস্টার সালমান খান অভিনীত বিজ্ঞাপন চালানো হতো। তখন কোম্পানীর মালিক ছিল ‘পিওর ড্রিংকস’। কিন্তু এবার ২২ কোটি রুপিতে মুকেশ আম্বানীর রিলায়েন্স গ্রুপ কিনে নিয়েছে এই ক্যাম্পা কোলা। কোকা-কোলা ও পেপসি নড়েচড়ে বসেছে। ক্যাম্পা কোলা মূল্যের উপর ৫০% ছাড় দিয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে কোকা-কোলা ও পেপসি ছাড় দিচ্ছে। তোমাকে আমি ‘ইনোসেন্ট’ নামক কোমল পানীয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। মনে হচ্ছে ভারতের মার্কেটে রিলায়েন্স গ্রুপ আট-ঘাট বেঁধেই লেগেছে। কিন্তু, তোমাকে আমি এই বিষয়ের গভীরে নিয়ে যেতে চাই। অর্থাৎ কোকা-কোলা বা পেপসির হর্তা-কর্তাদের স্টেটমেন্ট কি? ভারতে কোকা-কোলার সিইও জানায়, ‘‘নতুন প্রতিযোগী বাজারে থাকায় বাজারে আরও বিকল্প বিনিয়োগের একটি দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি হয়েছে।’’ পেপসির একজন সাবেক নির্বাহী চাপ স্বীকার করে বলেন, ‘‘তারা সর্বদা ভারতের স্থানীয় পণ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, ইতিমধ্যে বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতাও শুরু হয়ে গেছে।’’
এই ধরনের প্রতিযোগীতা করে কোকাকোলা, ইনোসেন্টকে অধোঃগলন (গিলে ফেলা) করতে দেখেছি। সেটা তো নেতিবাচক নিশ্চয়ই। ইনোসেন্ট কর্তৃপক্ষও ছিল নাট্যমঞ্চের শেষ অংকের ভিলেইন। ‘সামটাইমস এ ফাইট ইউল প্রডিউস উইন, সামটাইমস নট।’ ফাইট করাটা একটা ‘গুড ফিলোসপি’। কিন্তু মাঝে মাঝে তা ধ্বংস ডেকে আনে। কোকা-কোলা, পেপসি ও ক্যাম্পা কোলা যদি ভারতে পানীয় গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়াতে একসাথে চেষ্টা করে- তাহলে সবার জন্যই ভাল। মাঝখানে পণ্যের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করে একজন আরেকজনকে ঘায়েল করুক- এই প্রতিযোগীতা শুরু হলে ভোক্তা লাভবান হয়। ফেয়ার-টু-লস ও ডিজায়ার-টু-গেইন এর মাঝামাঝি একটা পয়েন্ট আছে তা হলো ডিজায়ার-টু-হেল্প। এটাই আদর্শ।
‘ইট ইজ নট হু ইউ নো, ইটস হু নোজ ইউ’ এর ভাষান্তর করলে দাঁড়ায়, এটা এই নয় যে তুমি কাকে চেনো, এমন হওয়া উচিত তোমাকে কারা কারা চেনে। মার্কেটিং যুদ্ধে তুমি সবাইকে চিনলেও কাজ হবে না, ভোক্তারা/ গ্রাহকরা তোমাকে চিনতে হবে। প্রফিট বাড়িয়ে তোমার মূল্য দেখাও। তোমার উদ্দেশ্য হলো ‘বেস্ট’ হাওয়া ‘বিট’ করা নয়। সব সময় কি আমরা জয়ী হই? না। কিন্তু, পরবর্তী সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়- সে ব্যাপারে সজাগ থাকা উচিত। সেবা গ্রহণকারী বা গ্রাহক অবশ্যই তোমাকে অধিক পছন্দ করবে, অধিক বিশ্বাস করবে, অধিক আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এবং তোমাকে অধিক বিশ্বাস করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাই বলি না কেন এ সবকিছুর শুরু কিন্তু ‘অধিক পছন্দ’ থেকে।
আমি তোমাকে সাধারন কোন ফর্মুলা দিতে পারবো না, যা তোমাকে মার্কেটে অপ্রতিদ্বন্দ্বি করে তুলবে। কিন্তু একটা ফিলোসফি তোমাকে বলতে পারি যে- তুমি (তোমার পণ্য) এত ভালো হবে যে, কেউ তোমাকে ইগনোর করতে পারবে না। জেফ্রি গিটোমার প্রতিদ্বন্দ্বিকে কিভাবে ম্যানেজ/হ্যান্ডেল করা যায়- সে সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বির সাথে পেরে উঠা আমার জন্য সত্যিই কঠিনতম, কিন্তু তারা (প্রতিদ্বন্দ্বি) সেটা করে যাচ্ছে। আর তুমি তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকো এবং যতোটা পারা যায় তাদের অবহেলা (ইগনোর) করো। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী