‘হ্যাপিনেস ইজ এ স্কিল’ সম্পর্কে তোমাদের আমি বলেছি। সেই সাথে লিডারশীপের ক্ষেত্রে ‘লিড বাই হার্ট’ বা ‘হার্ট ফাস্ট’ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ‘পিপল, সার্ভিস, প্রফিট (সংক্ষেপে পিএসপি) মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ‘নো ইয়োর মার্কেট’ (সংক্ষেপে কেইউএম) এবং ‘লাইফ স্কীল’ এর ক্ষেত্রে ‘মিরর প্রিন্সিপাল’ সম্পর্কে যা বলেছি সব কি তোমরা এখন মনে করতে পারছো? আমি জানি তোমাদের দু’জনেরই মনে আছে। আমি আজ মার্কেটিং বিষয়ে বলব। তোমাদের এই অল্প বয়সেই কেন এসব বলছি- তা কি জানো? তুমি যদি মার্কেটিং বিষয়গুলো জানো তাহলে সামনের দিনগুলোতে অপরাপর মানুষের সাথে মিশতে বা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে। তুমি এদেশে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিলেও এসব তোমাকে কেউ শেখাবে না। এদেশে লেখাপড়া বলতে বোঝায় শুধু দু-চারটা সার্টিফিকেট অর্জনকে। একই মানুষের সময়ের বা প্রেক্ষাপটের ভিন্নতার কারণে ‘সাইকোলজিক্যাল মুড’ পরিবর্তন হয়। যেমন ধর, একজন কাপড় বিক্রেতা যখন কাপড় বিক্রয় করেন, তখন এক রকম, কিন্তু ওই কাপড় বিক্রেতা যখন চাল-ডাল কেনার জন্য মুদির দোকানে ক্রেতা হয়ে যান- তখন তার নেশা থাকে জয়ী হওয়া। জেফ্রি গিটোমার বলেন, ‘‘ক্রেতা তোমাকে অবশ্যই পছন্দ করবে, বিশ্বাস করবে, তোমার মধ্যে আস্থা পাবে এবং তোমাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু ক্রয়-বিক্রয় বা লেনদেন শুরু হবে একে অন্যের পছন্দ করা থেকে।’’ তাহলে তোমরা জানলে, ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয় ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করা থেকে। ক্রেতা অনেক সময় সঠিক পণ্য সঠিক দামে পেলেও অপছন্দের বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় করেন না।
এখন তোমাদেরকে বলবো- ক্রেতা কেন পছন্দের পণ্য নায্য দামে পেলেও কিনতে পারেন না। মূলত: ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় না হওয়ায় ক্রেতার দায় থাকে না। বিখ্যাত একটা থিওরি আছে- ‘‘ঞবষষরহম রং ংবষষরহম. অংশরহম রং নুঁরহম.’’ বিক্রেতা যতো পণ্যের গুনাগুন নিয়ে কথা বলতে পারবে, পণ্য বিক্রয় সম্ভাবনা ততো বেশি থাকবে। অপরদিকে প্রকৃত ক্রেতা হলে পণ্যের অনেক বিষয় জিজ্ঞাসা করবে। এক্ষেত্রে ক্রেতা হওয়া যতটা সহজ ও আনন্দের, বিক্রেতার কাজটা ততোটাই কঠিন। সে কারণেই শপিং করলে অনেক ডিপ্রেশনের রোগীও সাময়িক ভালো হয়ে যায়।
বড়-ছোট মেয়ে, উভয়েই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। বড় মেয়েকে নির্দিষ্ট করে বললাম, শুরুতে যে বিষয়গুলো বলছিলাম- হার্ট ফাস্ট, পিপল-সার্ভিস-প্রোফিট, নো- ইয়োর মার্কেট, মিরর প্রিন্সিপাল- এর সবগুলোই একজন বিক্রয় প্রতিনিধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বড় মেয়ে বললো, ‘বিক্রয় প্রতিনিধি যথাযথভাবে কাজ করলেও ক্রেতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পণ্য রিজেক্ট করে। এর জন্য দায়ী কে?’ উত্তরে বললাম, ‘‘মূলত: দুই ধরনের ক্রেতা আছেন যার মধ্যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণী যারা অর্থ বাঁচাতে চান, আর ধনীক শ্রেণীর ক্রেতারা পণ্য ক্রয় করে জিততে চান।’’ অর্থ বাঁচাতে গিয়ে নিম্ন বা মধ্যম শ্রেণী গুণগতভাবে ঠকে যেতে পারেন। অর্থ বাঁচাতে পণ্যের গুণগত বিষয়টা উপেক্ষিত হয়। আর ধণীক শ্রেণী দামের কথা চিন্তা না করে গুণগত বিষয় যেমন- ফ্যাশান ও স্থায়ীত্ব নিয়ে ভেবে বসেন। এই কনসেপ্টকে পুঁজি করেই বিশ্ববাজারে ব্রান্ডগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। বড় মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো- ‘‘আদর্শ সেলার হতে গেলে আমাকে কি কি ফিলোসফি মনে রাখতে হবে?’’ আমি বললাম, ‘১. ক্রেতার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা, ২. মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা, ৩. অভুক্ত থেকে হলেও কাজ করার মানসিকতা, ৪. দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন, ৫. প্রতিদিনই মজা করা ও নিজেকে রিচার্জ করা।’
ছোট মেয়েকে বললাম, তোমার জন্য আজকের আলাপচারিতা কি কঠিন হলো? ও বললো, ‘‘না আব্বু! কঠিন হয়নি। আমি যা বুঝলাম, তার সার কথা হলো একজন বিক্রেতার মধ্যে ভালো মানুষ ও গুণগত নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যা যা দরকার তার সবকিছুই থাকা প্রয়োজন।’’ আমি বললাম- সেই জন্যই বলা হয়, ঐ পণ্যই বিক্রয় কর যা তাদের প্রয়োজন, কখনো ‘‘পুশ সেল’’ করো না অথবা যে পণ্য তোমার কাছে আছে শুধু সেগুলোই বিক্রয়ের চেষ্টা করো না। রোয়েনা বললো, ‘আমাদের মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় নিজের মূল্য বলতে বোঝায়- নিজের নাম, পোশাক, নিজের কৌতুহল বা প্রশ্ন, নিজের আইডিয়া, নিজের সৃজনশীলতা, নিজের উপস্থাপনা, নিজের কাছে নিজের অবস্থান, নিজের সক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ কৌশল এর সবগুলোকে। বড় মেয়ে আরও বললো- আব্বু তোমাদের প্রফেশনটা কিন্তু মার্কেটারদের মতো। আমি বললাম,‘‘অবশ্যই! সকলের পছন্দের ব্যক্তি হওয়া না হওয়াই হলো আমাদের পেশার সফলতা ও ব্যর্থতার মূল কথা।’’ (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী