নিজস্ব প্রতিবেদক:
২৫ শে মার্চ ২০২২ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা ডিসি সাহিত্য মঞ্চে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মন্জু, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, আবু হোসেন প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্থানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী সেই নির্বাচনে বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠনে আহ্বান জানানোর পরিবর্তে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব পাকিস্থানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকার্মী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর ব্যাপ্তি ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ।’
পাকিস্থানিদের ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে পরাজিত পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, ‘একাত্তরের গণহত্যাসহ পৃথিবীর সব গণহত্যা যেন আমরা ভুলে না যাই। অব্যাহতভাবে এ গণহত্যার স্বীকৃতি হিসেবে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার সপক্ষে দাবি জোরদার করতে হবে। এখনও কিছু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রয়েছে যাদের প্রতিহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও মর্যাদার ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচারের জবাব দিতেই ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকান্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাঈফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণহত্যার স্মৃতিচারণ করেন চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদুল ইসলাম, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম সুমাইয়া।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরাফাত রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবীর হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূইয়া, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু রাসেদ, জেলা প্রশাসনের নেজারাত ডেপুটি কালেক্টর সাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার নুর পেয়ারা বেগম নিলুসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রতিকী ব্ল্যাক আউট:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরুর আগ মুহূর্তে যে ভাবে চারদিক ভয়ঙ্কর অন্ধকার করে রাখা হয়। ঠিক সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে এক মিনিটের জন্য প্রতীকি অন্ধকারে রাখা হয় গোটা চুয়াডাঙ্গা শহর। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের সহায়তায় রাত সাড়ে দশটা থেকে ১০.৩০টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া জেলা শহরের সব জায়গায় এই প্রতীকি অন্ধকার (ব্ল্যাক আউট) কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গণহত্যার উপর দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী করে জেলা তথ্য অফিস।