নিজস্ব প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গার পোলবাগুন্দা গ্রামে স্ত্রী ডালিমা খাতুনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সোলার প্যানেলের পাইপের মধ্যে লাশ গুমের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আলমডাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ছেলে জামিরুল ইসলাম। এ মামলার একক আসামী নিহতের স্বামী ফন্টু মন্ডলকে গতকালই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালতে তোলার পর হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামী ফন্টু মন্ডল। এদিকে, গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ডালিমা খাতুনের দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গার রায়লক্ষ্মীপুর গাবতলার মাঠে সোলার প্যানেলের পাইপের মধ্যে থেকে স্ত্রী ডালিমা খাতুনের ক্ষত বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।
জানা গেছে, গত ৩৬ বছর আগে আলমডাঙ্গা উপজেলার নওলামারি গ্রামের মনছেন আলির মেয়ে ডালিমা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার পোলবাগুন্দা গ্রামের মৃত ইসলাম মন্ডলের ছেলে ফন্টু মন্ডলের বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে সারজিনা খাতুন ও ছেলে জামিরুল ইসলামের কয়েক বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, পোলবাগুন্দা গ্রামের স্কুলপাড়ার শের আলির সাবেক স্ত্রী টগি খাতুনের সঙ্গে ফন্টুর দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় বছর খানেক আগে শের আলি তার স্ত্রী টগি খাতুনকে তালাক দেন। এরপর ফন্টু মণ্ডল তার স্ত্রী ডালিমার নামে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন করে টগি খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে যান। ৭ মাস আগে আবারও বাড়ি ফেরেন ফন্টু। টগির সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই বলে স্ত্রীকে জানান। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক চললেও গত মঙ্গলবার ফন্টু মণ্ডল বাড়ি থেকে নগদ ৭ হাজার টাকা নিয়ে বাগুন্দা বাজারে আসেন। বাজার থেকে বিকাশের মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমিকা টগিকে টাকা পাঠান। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ডালিমা খাতুন তার স্বামীকে বলেন আগামীকাল কিস্তির টাকা দিতে হবে। কাছে কোন টাকা নেই বলে জানান ফন্টু। বাড়ি থেকে সাত হাজার টাকা নিয়ে কি কাজে ব্যয় হলো এই বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী ফন্টু।
গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিনমজুর ফন্টু মণ্ডল স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বের হন। রাতে তিনি বাড়িতে ফিরলেও তার স্ত্রী বাড়িতে ফেরেন না। ছেলে জামিরুল তার মায়ের খবর জনতে চাইলেও তেমন সদুত্তোর পান না। স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে রাত কাটান ফন্টু। কিন্তু বৃহস্পতিবার খুব ভোরে কোদাল নিয়ে মাঠে যান তিনি। নিজের জমিজমা না থাকলেও ভোরে মাঠে যাওয়া নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করেন। সকালে মাঠ থেকে ফিরতে দেখে গ্রামের অনেকে তাকে প্রশ্ন করেন। সকালে ছেলে জামিরুল ইসলাম তার মায়ের খোঁজ নেয় বাবার কাছে। অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হয় তার। দুপুরের পর ফন্টু মণ্ডল গা ঢাকা দেন। এরপর ছেলে জামিরুল গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার মায়ের খোঁজ করতে থাকে। বিকেলের দিকে পার্শ্ববর্তী রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের গাবতলার মাঠের একটি ভুট্টাখেতে রক্ত ও চুল দেখতে পান গ্রামবাসী।
তারা জানায়, ওই মাঠে সোলার প্যানেলের পাইপের ভেতরে একটি মরদেহের খন্ডাংশও দেখা যাচ্ছিল। পাশেই রক্ত ও মাথার চুল পড়ে আছে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থাকা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। মরদেহ উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের খবর দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পাইপের মধ্যে থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানায় নেওয়া হয়। এদিকে গতকাল বিকেল ফন্টু মন্ডল তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করতে আসেন সরোজগঞ্জ বাজারে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই সরোজগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ তাকে আটক করেন।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামী একজনই। তাকে গ্রেফতারের পর আদালতে তোলা হলে বিজ্ঞ বিচারকের সামে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। এছাড়া নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকালই গ্রাম্য কবরস্থানে তার দাফনকাজ সম্পন্ন হয়েছে।