মুতাছিন বিল্লাহ ও ফিরোজ ইফতেখার:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮ ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনের ভোটগ্রহন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহন শেষে গণনার পর রাতেই ঘোষনা করা হয় ফলাফল। জীবননগর উপজেলার ৬ ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীর জয়ী হয়েছেন। অপরদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়নে পরাজিত হয়েছে নৌকা। এ উপজেলায় দুইজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহন। শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রাখা হয়েছিল। একইসাথে জীবননগরের ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। এছাড়া মাঠ পর্যবেক্ষণে ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাঠে ছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
মাঠ পর্যবেক্ষণের সময় সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে মিলিত হন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর সাথে বারবার সংলাপ করছে ইসি। তবে, কোন কোন দল সংলাপে এসেছে। আবার কোন কোন দল আসেননি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন সব দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। তবে, নির্বাচনে আসা না আসা সেটা দলের ব্যাপার। ইসি আহসান হাবিব খান আরও বলেন, ইভিএম হচ্ছে শতভাগ স্বচ্ছতার প্রতীক। এখানে কোন পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই। আমরা ৬০০ এর বেশি নির্বাচন করেছি। কিন্তু কোন পক্ষপাতিত্ব করিনি।
নির্বাচনে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর না মিললেও বাঁকা, হাসাদাহ ও উথলী ইউনিয়নে কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। শুধু তাই নই এক চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেছিলো তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। আমি সরেজমিনে সেই কেন্দ্রে গিয়ে দেখি তা সঠিক নয়। অন্য এজেন্টদের সাথে কথা বলেছি তারা বলেছেন তারা আসে নাই। তাদের আরো অভিযোগ ছিলো একজনের ভোট আর একজন দিয়েছে সেটাও সঠিক নয়। পরে সে ক্ষমা চেয়ে চলে গিয়েছে।’
বাঁকা ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে যখন অভিযোগ এসছিলো অভিযোগ পাওয়ার পর পরই সেখানে দায়িত্ব থাকা ম্যাজিস্ট্রেট পৌঁছেছে, কোন প্রকার অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে নাই। হয়তো কিছুটা শুরু হতে পারে কিন্তু সেই শুরুতে সম্পূর্ণ হতে পারে নাই।’
জীবননগর উপজেলা ৬ ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন যারা, উথলী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হান্নান ৫ হাজার ৩৬৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী আনসার প্রতীক নিয়ে আফজাজুল রহমান ধীরু পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৫ ভোট।
বাঁকায় ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. আব্দুল কাদের প্রধান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাফিজুর রহমান মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৫৩৪ ভোট।
কেডিকে ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৭ হাজার ৬৭৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত প্রার্থী খায়রুল বাশার শিপলু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ১ হাজার ৬১ আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন তানভির হোসেন রাজিব।
হাসাদাহ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. রবিউল ইসলাম বিশ্বাস। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুল আলম আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৫৬৫ ভোট।
রায়পুর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৬২ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. তাহাজ্জাত হোসেন মির্জা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীক নিয়ে মো. সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ৬৫২ ভোট।
মনোহরপুর ইউনিয়নে ৬ হাজার ৩০৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সোহরাব হোসেন খান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুজ্জামান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৪৯২ ভোট। চুয়াডাঙ্গা সদর নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, সুষ্ঠু এ নির্বাচনে সাধারণ মানুষ খুশি। ইউনিয়নগুলোতে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হয়েছে।
এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নে এজাজ ইমতিয়াজ বিপুল ও আইলহাঁস ইউনিয়নে মিনাজ উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী চেয়ারম্যান দুজনই স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করেন। গতকাল রাতে নির্বাচন কর্তকর্তা বেসরকারী ভাবে দুই প্রার্থীকে বিজয়ী ঘেষনা করেন। এছাড়াও সংরক্ষিত পদে ও সাধারণ সদস্য পদেও ফলাফল ঘোষনা করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার নাগদাহ ও আইলহাঁস ইউনিয়নে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হয়। সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ণ পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নাগদাহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ বিপুল জোয়ার্দ্দার চশমা প্রতিক নিয়ে ৪ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হায়াত আলী ২ হাজার ৫ শত ২৭ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী দারুস সালাম ১ হাজার ৫ শত ৯৮ ভোট,স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মিশর আলী ১ হাজার ২ শত ৭৩ ভোট, আতিকুর রহমান ১,হাজার ৫৫ ভোট, আওয়ালুজ্জামান ৮শত ৫৫ ভোট, হাবিবুল্লাহ ১শত ৩৭ ভোট, আলমগীর হোসেন ১ শত ১৩ ভোট।
নাগদাহ ইউনিয়নে ১নং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে হালিমা বেগম মাইক প্রতিক নিয়ে ১৭৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, ২ নং সংরক্ষিত সদস্য পদে মোছাঃ নারগিছ পারভীন সুর্যমুখি ফুল প্রতিক নিয়ে ১৭২৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী, ৩নং সংরক্ষিত সদস্য পদে মোছাঃ নাছিমা খাতুন মাইক প্রতিকে ৯৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ি হয়েছেন। সাধারণ সদস্য পদে ১ নং গোলাম সরোয়ার মোরগ প্রতিকে ৭৮৭ ভোট পেয়ে, ২নং রনি মাহমুদ ৯৭৭ ভোট পেয়ে ,৩নং মকবুল হোসেন টিউবওয়েল প্রতিক নিয়ে ৯৩১ ভোট পেয়ে, ৪ নং মোঃ বাদল রশিদ টিউবওয়েল প্রতিকে ৮০১ ভোট পেয়ে, ৫ নং আনিছুর মিয়া টিউবওয়েল প্রতিকে ৫৪৩ ভোট পেয়ে, ৬ নং হেলাল জোয়ার্দার টিউবওয়েল প্রতিকে ৫২৮ ভোট পেয়ে, ৭ নং মোঃ রফিকুল ইসলাম মোরগ প্রতিকে ৯১৯ ভোট পেয়ে, ৮নং মোঃ মনিরুজরজামান তালা প্রতিকে ৪৫২ ভোট পেয়ে, ৯নং ওয়ার্ডে মোঃ আনিসুজ্জামান টিউবওয়েল প্রতিকে ৪৬৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে, আইলহাঁস ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মিনাজ উদ্দিন বিশ্বাস চশমা প্রতিক নিয়ে ৪ হাজার ৭শত ৫ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জাইদুল ইসলাম ৪ হাজার ১ শত ৫০ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও বিল্লাল গনি ১ হাজার ৯শত ৮ ভোট পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে ১নং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মুসলিমা খাতুন মাইক প্রতিক নিয়ে ২৬১৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী, ২নং মোছাঃ রংপতি খাতুন সাঁকো প্রতিক নিয়ে ৮৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী,৩ নং ওয়ার্ডে মোছাঃ রিনা খাতুন বক প্রতিকে ২০৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী। সাধারণ সদস্য পদে ১নং মোঃ লিটন মোল্লা ফুটবল প্রতিকে ৫৩০ ভোট পেয়ে, ২নং মোঃ লিটন মিয়া ফুটবল প্রতিকে ৮৩৮ ভোট পেয়ে, ৩ নং আবু হানিফ টিউবওয়েল প্রতিকে ৫৩২ ভোট পেয়ে, ৪ নং মোঃ ইয়ারুল আলী টিউবওয়েল প্রতিকে ৩৭৭ ভোট পেয়ে, ৫ নং মোঃ রোকনুজ্জামান মোরগ প্রতিকে ৮৪৩ ভোট পেয়ে, ৬ নং মোঃ শামিম জামান মোরগ প্রতিকে ৪২৪ ভোট পেয়ে, ৭ নং মোঃ ওহিদুল ইসলাম মোরগ প্রতিকে ৫৩৭ ভোট পেয়ে, ৮ নং মোঃ ফজলুর রহমান মোরগ প্রতিকে ৬৭০ ভোট পেয়ে ও ৯ নং ওয়ার্ডে মোঃ ওল্টু মিয়া ফুটবল প্রতিকে ৭৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার এম এ জি মোস্তফা ফেরদৌস।