নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের ৬ ইউনিয়ন ও আলমডাঙ্গার ২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন আজ। হামলা পাল্টা হামলা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে চলে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। সেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার ভোট আজ। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহন। মোট ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে গতকাল বুধবার কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেকসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া মাঠে রয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
আমাদের জীবননগর অফিস প্রধান মুতাছিন বিল্লাহ জানান:
জীবননগরে বাঁকা, হাসাদাহ, রায়পুর, উথলী, কেডিকে ও মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ। আজ সকাল ৮ থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) অন্যান্য সব সরঞ্জাম। প্রতি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা সংগ্রহ করছেন এসব উপকরণ। জীবননগর উপজেলার ৬ ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শনে থাকবেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান।
জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারে সেই লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন। আজ সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পরিদর্শন করবেন তিনি। বেলা দেড়টায় মধ্যাহ্নভোজের পর বেলা ৩টায় যশোরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে যশোর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে জীবননগর থানা সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রতিটি কেন্দ্রের এসব জিনিসপত্র সংগ্রহের কাজ। বিকালেই পৌঁছে গেছে সকল ইউনিয়নে ভোটের সরঞ্জাম। এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা সেজেছে নির্বাচনী আমেজে। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোট দিবেন ভোটাররা। এলাকার রাস্তাঘাটসহ নানা স্থানে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলা ৬টি ইউনিয়ন। সাধারণ ভোটাররা উৎসব মুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করছেন।
জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৬টি ইউনিয়ন মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩হাজার ৭৮৫জন। চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ২৮ জন, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রয়েছে ২৫৮জন প্রার্থী।
উথলী ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫হাজার ১৫৩জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭হাজার ৬১৪জন এবং নারী ভোটার ৭হাজার ৫৩৯জন। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হান্নান, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আফজালুর রহমান ধীরু, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, শাখাওয়াত হোসেন, আব্বাস উদ্দিন জোয়াদ্দার, লিমন ফেরদৌস।
মনোহরপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৩হাজার ৪৬১জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬হাজার ৭৮৩জন,নারী ভোটার ৬হাজার ৬৭৮জন। এ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহরাব হোসেন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন বিএনপির নেতা কামরুজ্জামান, মো. রাজা মিয়া এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হলেন আবু নাঈম।
কে.ডি.কে ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৩হাজার ৮৯৪জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬হাজার ৬৯২জন এবং নারী ভোটার ৬হাজার ৯০২জন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাইরুল বাশার শিপলু, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন বিএনপির নেতা মো. তানভির হোসেন রাজীব।
বাঁকা ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৫হাজার ১৪৫জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭হাজার ৫৮৪জন,নারী ভোটার ৭হাজার ৫৬১জন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের প্রধান। জাতীয় পার্টি মো. তরিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাববুদ্দিন মালিতা, মো. আবুল কাশেম মুন্সী, মাওলানা হাফিজুর রহমান, রাজা আহাম্মেদ।
হাসাদহ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫হাজার ৮৫৬জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭হাজার৯০১জন ,নারী ভোটার ৭হাজার ৯৫৫জন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রবিউল ইসলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন মো. সোহরাব বিশ্বাস, মো. ইসরাফিল হুসাইন, মো. সামছুল আলম, মো. বাবুল আকতার টলো, মো. মতিয়ার রহমান। এবং রায়পুর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১০হাজার২৭৬জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫হাজার ২৫৭জন এবং নারী ভোটার ৫হাজার ১৯জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন তাহাজ্জদ মিজা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হলেন মো. আব্দুর রশিদ শাহ , সাজ্জাদ বিশ্বাস, মো. সাজ্জাদ হোসেন ও মো. আব্দুল হান্নান।
উথলী, কেডিকে ও মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন জীবননগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজর আহমেদ। আর বাঁকা, হাসাদাহ, রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান।
নির্বাচনে ৫৪টি কেন্দ্রে ১জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ২জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিকেন্দ্রে ২জন করে মোট ৫২২জন পোলিং অফিসার থাকবেন। প্রতিটি ভোট কক্ষে ১টি করে ২৬১টি ইভিএম মেশিন থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে ১টি করে মোট ১৩০টি অতিরিক্ত ইভিএম মেশিন থাকবে বলেও জানান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মেজর আহাম্মেদ।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকুনুজ্জামান বলেন, ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ। এই নির্বাচনে সম্মানিত ভোটাররা নির্বিঘ্নে যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
আলমডাঙ্গা অফিস প্রধান ফিরোজ ইফতেখার জানান:
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ। গতকাল বুধবার নির্বাচন অবাধ স্ষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ করতে থানা চত্বর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের সরঞ্জাম। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনিকভাবে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, ডিবি, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা থাকবেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত।
নির্বাচন কর্মকর্তা এমজি মোস্তফা ফেরদৌস জানান, সব কেন্দ্রই ঝুকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, দুটি ইউনিয়নে ১৮টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে ১ জন এসআই, ১ জন এএসআইসহ ৯ জন পুলিশ সদস্য, ১৫ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স, একাধিক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে।
এদিকে আলমডাঙ্গার নাগদাহ ও আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২৩ অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে গতকাল থানা প্রাঙ্গণে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানার (ওসি) সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ব্রিফিং প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক, দামুড়হুদা থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার (ওসি তদন্ত) আবু সাঈদ, আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল আলিম, ওসি (অপারেশন) একরাম প্রমুখ। ব্রিফিংয়ে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রশাসনককে কঠোর ভূমিকা পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এই দুটি ইউনিয়নে মোট ১২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নাগদাহ ইউনিয়নে ৯ জন ও আইলহাঁস ইউনিয়নে ৩ জন চেয়ারম্যান। নগদাহ ইউনিয়নে ৯ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, হায়াত আলী (নৌকা প্রতিক), স্বতন্ত্র প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ বিপুল (চশমা প্রতিক) স্বতন্ত্র প্রার্থী দারুস সালাম(মটর সাইকেল প্রতিক), আলমগীর হোসেন (রজনীগন্ধা প্রতিক), মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (আনারস প্রতিক ), মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (ঘোড়া প্রতীক), আওয়ালুজ্জামান (অটো রিক্সা প্রতিক), মিশর আলী (টেলিফোন প্রতিক), মোহাম্মদ আবুল হাসনাত (টেবিল ফ্যান)
আইলহাঁস ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, জাহিদুল ইসলাম বাদল (নৌকা প্রতিক), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ বিল্লাল গনি (আনারস প্রতিক) ও মিনাজ উদ্দিন বিশ্বাস (চশমা প্রতিক)। অন্যদিকে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ২৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।