শীত কমে এসেছে। বসন্তের বাতাস উঁকি দিয়ে দেখছে- কখন পুরাপুরি আসা যায়! আমরা সবাই গ্রামে এসেছি। বড় মেয়ের ইউনিভার্সিটি ছুটি। ছোট মেয়ে ‘অরোনা’ দশম শ্রেনীতে। স্কুলে ক্লাস-পড়াশোনা নেই। যাই হোক- নিচ তলা থেকে দোতলায় মেয়েদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি তারা দু’জন গল্প করছে। আমাকে দেখে চা’য়ের অফার করলো। ছোট মেয়ে অরোনা বললো- ‘তুমি শুধু রোয়েনা আপুকে সব দিচ্ছো, আমিতো ছোট না!’ আমি বললাম, ‘ ঠিক আছে, আম্মু। আজ তোমাদের দু’জনকেই ‘কিভাবে সমালোচনা সহ্য করতে হবে’ সে বিষয়ে বলবো। ইতিমধ্যে রোয়েনা চা নিয়ে রুমে ফিরে এলো। আমি ‘সমালোচনা’ নিয়ে কথা শুরু করলাম।
নেতৃত্বের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো- সমালোচনা। তোমরা যদি ব্যর্থ হও, সমালোচনা তোমাদের বিদ্ধ করবে। আর যদি সফল হও- তোমার সাফল্যের উপায় বা পথের সাথে অধিকাংশ লোক একমত পোষণ করবে না। গঠনমূলক সমালোচনার চেয়ে নেতিবাচক সমালোচনায় মানুষ বেশী তৃপ্তি পায়। কিন্তু নেতৃত্ব দিতে হলে তোমাদের সমালোচনা হজম করা শিখতে হবে। গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টাটল বলেন, ‘‘সমালোচনা সহজেই এড়ানো যায়- কিছু না বলে, কিছু না করে এবং নিজে কিছু না হয়ে।’’ সমালোচনা আসবেই- সমালোচনা ম্যানেজ করা তোমাদের শিখতে হবে। একাজে ৪ টি ধাপ খুবই কার্যকর।
১. আত্মসচেতনতা:
এক্ষেত্রে আত্মসচেতনতা তোমাদের বন্ধুর মতো কাজ করবে। তোমরা যদি প্রতিষ্ঠান প্রধান হও, তাহলে মনে রাখবে- তোমাদের নিয়ে যে সমালোচনা- তা তোমাদের ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, পজিশন নিয়ে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেন, ‘‘তিনটি জিনিস খুবই কঠিনঃ লোহা, ডায়মন্ড ও নিজেকে জানা।’’ সমালোচকদের সমালোচনা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তোমাদের থাকতে হবে। তোমাদের যদি এটি না থাকে, তাহলে সে সমালোচনাকে পাত্তা দেবার দরকার কি? আর যদি সমালোচিত বিষয়ে তোমার দায় ধরা পড়ে, তাহলে তা গ্রহণ করবে এবং শিখে নেবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।
২. নিজেকে পরিবর্তন করা:
যখন আমি তোমাদের সমালোচনা করবো- তখন সেটা গঠনমূলক, আর যখন তোমরা আমাকে সমালোচনা করবে- তখন সেটা নেতিবাচক- এরকম মানসিকতা থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে। জ্ঞানী মানুষের পরামর্শ, উপদেশ ও সমালোচনা অবশ্যই কাক্সিক্ষত। নিজেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অভাব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তোমরা মনে রাখবে- কখনোই ডিফেন্সিভ হবে না, প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান করবে, নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন গেথে নেবে। তাহলেই সাফল্যের মহাসড়কের সন্ধান পাবে।
৩. নিজেকে মেনে নেওয়া:
প্রফেসর ও লেখক লিও বাসছাগলি বলেন, ‘‘পৃথিবীর সবথেকে সহজ কাজ হলো, নিজে-নিজের মতো হওয়া। আর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো, নিজেকে অন্যদের আশানুরূপ করে তোলা যা কখনোই উচিত নয়।’’ নিজেকে শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং শ্রেষ্ঠ নেতা বানানোর একটাই পথ- নিজেকে নিজের মতো রাখা। এভাবেই তুমি ‘সেরা তুমি’ হয়ে উঠবে। আর যদি অন্যরা কি ভাববে- এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়- অন্যদের মতামতের প্রতি তুমি দুর্বল, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী নও। এক্সিকিউটিভ কোচ ও কনসালটেন্ট জুডিথ বার্ডইউক বলেন, ‘‘প্রকৃত আত্মবিশ্বাস আসে নিজেকে জানা ও তা মনে প্রাণে করা থেকে।’’
৪. নিজেকে ভুলে যাওয়া:
সমালোচনা সহ্য করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো- নিজেকে ভুলে যাওয়া। তোমরা যখন বড় হবে- তখন পৃথিবী তা কিভাবে দেখছে- সেটা কেন তোমাদের কাছে গুরুত্ব পাবে? বিশ্বে তোমরা খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ না। নিজেদেরকে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোন কারণ নেই। এ বিষয়ে প্যাকেনহ্যাম বিট্রির উপদেশ হলো, ‘‘তোমার নিজেকে নিয়ে বাঁচতে শেখ। তুমি যদি সমালোচিত হও, তাতে মনোযোগ দিওনা, যদি কেউ ঘৃণা করে- তাকে কেয়ার করো না। নিজের গান গাও, নিজের স্বপ্ন দেখ, নিজের আশা জাগিয়ে রাখ এবং নিজের প্রার্থনা নিজেই করো।’’ ছোট মেয়ে অরোনা আজই এরকম আসরে প্রথম বসলো। ভাবছি, এরূপ আলোচনায় ওকে নিয়মিত রাখা উচিত। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী