৩ এপ্রিল, ১৯৭৩ সাল। নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলের বাইরে রাস্তায় উর্ধ্বশ^াসে হাঁটছেন মার্টি কুপার। অজানা এক শিহরণে কাঁপছেন মি. কুপার। ২.২ পাউন্ড ওজনের একটা যন্ত্র বাম কানে চেপে ধরে কথা বলছেন। পড়িমরি করে গাড়ীর ধাক্কা থেকে নিজেকে সামলে নিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম মোবাইল ফোন এবং প্রথম কল। মার্টি কুপার হলেন মটোরোলা মোবাইলের সিইও। মি. কুপারকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন- কেমন হলো- আপনার যন্ত্রটি। কুপার বললেন, ‘ব্যাটারীর চার্জ থাকবে মাত্র ২০ মিনিট। তাতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো- এর ওজন।’ কয়েক মাস ধরে প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেন- ওজন কমানো অর্থাৎ সাইজ কমানোর কাজে। পরবর্তীতে ‘ব্যবহার বান্ধব’ করে মটোরোলা ফোন বাজারজাত করা হলো। প্রথমদিকে মটোরোলার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার একচেটিয়া। কিন্তু এটা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি।
বড় মেয়ে কথা শুনছিল। হঠাৎ করেই বললো- ‘তুমি কি এখন মোবাইল প্রযুক্তির ইতিহাস নিয়ে কথা বলবে?’ আমি বললাম, ‘না’। ‘‘তবে’’? এইবার আমি উত্তর দিলাম- ‘প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে ঝুঁকি ও তার সম্ভাবনা’ নিয়ে কথা বলছি। প্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ ডিভাইসের জন্ম পাশ্চাত্যে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মার্কেটে এর বিকাশ ঘটেছে চীনের হাত ধরে। পশ্চিমারা তৈরী করছে অথচ কয়েক মাসের মধ্যেই চীনের কাছে বাজার হারাচ্ছে।
এবার তোমাকে ঐঞঈ কোম্পানীর প্রথম এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন আবিষ্কারের কাহিনী শোনাবো। ঐঞঈ কোম্পানী চিন্তা করলো ব্লাক-বেরী বা আইফোনের চেয়েও অত্যাধুনিক ফোন বাজারজাত করবে। তাদের ৫০ জন মেকানিক্যাল ও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার একটি রুমে আবদ্ধ করে কাঁদা-মাটি ও খাতা পেন্সিল দিয়ে বলা হলো মোবাইলের নতুন ডিজাইন আবিষ্কার করতে- যা পৃথিবীর কেউ দেখেনি। ইঞ্জিনিয়ার’রা নতুন কোন ডিজাইন দিতে পারছিল না। সিইও টি’চো বললেন- তোমাদের ব্রেইনটা ‘জিরো লার্নিং’ করো, যেন- জীবনে তোমরা কোন ফোন দেখনি। এইভাবে তারা এক-একজন অদ্ভুদ সব ডিজাইন জমা দিয়েছিল। সেইগুলোর সমন্বয় করে বর্তমানের টাচ স্ক্রীন আকৃতি দাঁড় করানো হয়। পরবর্তী বছর ১৯৯৮ সালে ঐঞঈ উৎবধস নামে সর্বপ্রথম এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ফোন বাজারজাত করে।
প্রশ্ন হলো- এই মটোরোলা বা ঐঞঈ ফোনের বর্তমানে অবস্থা কি? তারা তো টপ চার্টে নেই। এর কারণ কি? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার সত্য নাদেলা, যিনি মাইক্রোসফটের সিইও, লিখিত ‘হিট রিফ্রেশ’ বইয়ের কথা মনে পড়ছে। এই বইয়ে তিনি নোকিয়া ফোনের স্বত্ত্ব ক্রয়ের পর মাইক্রোসফটের যে ধ্বস নেমেছিল তার বর্ণনা করেছেন। মাইক্রোসফট তখন ধ্বংসের মুখে। বিল গেটস দক্ষিণ আফ্রিকার অনুন্নত এলাকায় তাবু গেড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের ব্যবহার দেখাতেন, শুধু তাই নয়- হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে নিখুঁতভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়- এইসব মানবিক বিষয় সংযুক্ত করেন। মাসের পর মাস পরিশ্রম করে নতুন বাজার তৈরী করেন- মানবিকতার চাদর বিছিয়ে। তিনি কাড়ি কাড়ি ডলার বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ঢেলেছেন। এসব কিছুর পিছনে ব্যবসা।
মেয়েটা বললো- কিন্তু চীনের প্রযুক্তি বিকাশের বিষয় এর সাথে সম্পৃক্ত হলো কিভাবে? হ্যাঁ! সেটাই তোমাকে এখন বলবো। পাশ্চাত্যের জায়ান্টরা- যে ডিভাইস বা সফটওয়্যার নতুন করে আবিষ্কার করে, চীন সেটাকে আরও সহজ, ব্যবহার বান্ধব ও কম দামের সুবিধা দিয়ে বাজার দখল করছে। চীনের টেকনোলজি- পাশ্চাত্যের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। মেয়েটা তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করে বসলো- তাহলে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর করণীয় কি? হ্যাঁ, এটাই হলো- মূল জায়গা। সেটা হলো- কোয়ালিটি। পাশ্চাত্য কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তৈরীর দিকে বেশী মনোযোগী, যাতে কোয়ালিটি কাস্টমার হাতছাড়া না হয়। ষ্টোন ফিল্ডের সিইও মি. গ্যারি হার্শবার্গ বলেন, ‘‘উৎকর্ষতা, উৎকর্ষতা, উৎকর্ষতা: কখনো এটাতে ঢিল দিওনা। এমনকি যদি তোমার কোম্পানীকে টিকিয়ে রাখা কঠিনও হয়। যখন তুমি আপোষ করবে, তখন তুমি সাধারণ হয়ে যাবে এবং অত:পর তোমার মৃত্যু হবে।’’ মেয়েটা বললো- গ্যারি হার্শবাগ যথার্থই বলেছেন। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী