প্রুশিয়া বা বর্তমান জার্মানির রাজা ফ্রেডরিক বার্লিনের রাস্তায় হাঁটছিলেন। এমন সময় একজন বৃদ্ধ রাজার মুখোমুখি হলেন। রাজা ফ্রেডরিক বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনি কে?’’ বৃদ্ধ লোকটি উত্তর দিলেন, ‘‘আমি একজন রাজা।’’ রাজা হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘রাজা! তা আপনি কোন রাজ্যের রাজা?’ বৃদ্ধ লোকটি উত্তর দিলেন, ‘‘আমি আমার নিজের রাজা।’’
জন সি. ম্যাক্সওয়েল বলেন, যদি তুমি তোমার অপেক্ষাকৃত ভাল প্রতিষ্ঠানের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল টিম চাও, যারা তোমাকে অপেক্ষাকৃত ভাল ফলাফল দেবে তাহলে তোমার নিজেকে অপেক্ষাকৃত ভালভাবে চর্চা করতে হবে। এই কথা কথা বলতে না বলতেই বড় মেয়ে বলে উঠলো, আব্বু, তুমি কি ‘মিরর প্রিন্সিপাল’ নিয়ে কথা বলছো? আমি বললাম, ‘ইতিপূর্বে আমিতো তোমাকে এটা নিয়ে কিছু বলিনি, তুমি জানলে কিভাবে?’ মেয়েটা বললো, ‘‘সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মিরর প্রিন্সিপাল হলো- প্রথম পক্ষ হিসাবে আমরা অবশ্যই নিজেকে আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো, তাই তো?’’ আমি বললাম-‘‘একদম তাই!’’ যখন আমরা বোকা থাকি, তখন আমরা পৃথিবীকে জয় করতে চাই, আর যখন আমরা বুদ্ধিমান হই- তখন আমরা নিজেকে জয় করতে চাই। নিজেকে জেনে বুঝে নেতৃত্বে আসতে যে কোন মহান নেতারও সময় লাগে। আমরা যেমন তাৎক্ষণিকভাবে ওটসমিল, কফি বা মাইক্রোওভেনে পপকর্ণ তৈরী করতে পারি- সেভাবে নেতা তৈরী করতে পারি না। এই ধরণের ‘মাইক্রোওভেন নেতা’ টিকে থাকতে পারে না।
নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কেপটাউনের একজন লিজেন্ড ব্যবসায়ী তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসবেন। ম্যান্ডেলা প্রধান গেটের কাছে অপেক্ষা করছিলেন। সময়মতোই ব্যবসায়ী পৌছালেন, ম্যান্ডেলা তাকে স্বাগত জানালেন এবং গাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। তারা দু’জনে একটা রুমে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে নাস্তা আসলো। ম্যান্ডেলা ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সঙ্গে আসা মানুষটি কোথায়? ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘ওহ! আপনি ড্রাইভারের কথা বলছেন। ও গ্যারেজে আছে।’’ এই কথা শুনে ম্যান্ডেলা নিজে গিয়ে ড্রাইভার সাহেবকে ডেকে আনলেন এবং নিজের পাশে বসিয়ে নাস্তা করালেন। এমনকি বিদায়ের সময় ব্যবসায়ী সহ ড্রাইভারের সাথেও হ্যান্ডশেক করে বিদায়ী অভিবাদন জানালেন।
নেতৃত্ব মানে এই নয় যে- সবার আগে ‘ফিনিশিং লাইন’ স্পর্শ করা, নেতৃত্ব হলো- সহকর্মীদের সাথে নিয়ে ‘ফিনিশিং লাইন’ স্পর্শ করা। যদি তুমি টিমমেটদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকো- তাহলে তুমি তাদের নেতা নও। নেতা হলো- তুমি তাদের সাথে নিয়ে দৌড়াবে। মূলত: নেতৃত্ব হলো বিশ^াস ও আস্থার অপর নাম, এটা কোন অধিকার নয়। যখন নেতা তার নিজেকে বিশ্লেষণ করে না, মানুষ তাকে সম্মান করে না।
ওয়েন্ট কেলীর ‘পোগো’ কার্টুনের একটি বিখ্যাত উক্তি তোমাকে না বলে পারছিনা- আমরা আমাদের শত্রুকে চিহ্নিত করেছি, আর সে শত্রু হলো- আমরা নিজেরা।’ মূলত: আমাদের সকল ব্যর্থতার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। নিজেরা কম পরিশ্রম করে বেশীটা চাই; আবার আমরা মধ্যম শ্রেনীর কর্মী হয়ে শ্রেষ্ট হতে চাই। পৃথিবী- কম ও মধ্যম শ্রেণীর কর্মীর জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠুর। জেনারেল ইলেকট্রিকের সিইও জ্যাক ওয়েলস বলেন- ‘‘যদি তোমার প্রতিযোগীতা করার যথেষ্ট সামর্থ না থাকে, তাহলে প্রতিযোগীতা করো না, মানুষ কখনো গড়পড়তাকে আদর্শ মানবে না।’’ তোমার ভিতরে অদ্বিতীয় কোন গুণ থাকলে তা তোমাকেই আবিষ্কার করতে হবে এবং তা নিয়ম মেনে চর্চা করতে হবে- তাহলে তুমি ‘বক্তা না হলেও শিক্ষক হতে পারবে’।
শেষে তোমাকে একটা গল্প বলি: পাড়ায় একটি ক্লাব গড়ে উঠলো। ঐ ক্লাবে নানান বয়সী মানুষ সদস্য হলো। কমিটি করতে গিয়ে- আয়োজকরা ৪ বছরের এক ছেলেকে সভাপতি বানালো। এমনটা কেন করলো জানতে চাইলে আয়োজকরা বললো- তাকে সেক্রেটারী করা সম্ভব হল না কারণ সে লেখাপড়া জানে না, ক্যাশিয়ার বানানো গেলো না কারণ সে গুনতে জানে না; তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা গেলো না কারণ সে ভাল কথা বলতে পারে না। যদি আমরা তাকে কোন পদের জন্যই পছন্দ না করি, তাহলে সে মন খারাপ করবে- তাই তাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। (চলবে)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী