বাইরে তখনো বৃষ্টি। বাবা-মেয়ে আমরা অপেক্ষা করছি কখন বৃষ্টি থামবে। মেয়েটা কথা শুরু করলো, ‘‘আব্বু, জে.ডি পাওয়ার এর সিইও মি. মার্ক ও কিম্বার্লি ক্লার্কের সিইও মি. ডারইউন-ই-স্মীথ; দু’জন দেখছি দুই স্বভাবের সিইও।’’ বললাম- ‘‘মি. মার্ক, কিন্তু পরবর্তীতে তার আচরণে পরিবর্তন এনেছিলেন। তার ডিএনএ তে ভাল কিছুই ছিল। একটু ঘষা-মাজার প্রয়োজন হয়েছিল। দেখ, তিনি কিন্তু ফ্লোরে পড়ে থাকা টুথপিক নিজেই পরিষ্কার করেছিলেন। ‘ইট দ্যা ফ্রগ’ শিরোনামে ব্রায়ান ট্রেসির একটি বিখ্যাত বই আছে, যেখানে ইতর শ্রেণীর কাজটাকে নিজে করাকেই বোঝান হয়েছে। সবচেয়ে ‘ছোট’ (তথাকথিত) কাজটা করবে সবচেয়ে বড় কর্তা। তাহলে কোন কাজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। যে কাজটা মি. স্মীথ করতেন।’’
মেয়েটি আবার মি. মার্কের প্রসঙ্গ টেনে বললো- ‘‘মি. মার্ক কারও কোন পরামর্শ নিতেন না। নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতেন। একধরণের স্বৈরাচার।’’ আমি বললাম, ‘‘নেতৃত্ব দিতে হলে আগে অধ:স্তনদের কথা শুনতে হবে, তাদেরকে বুঝতে হবে, তাদের স্বভাব অর্থাৎ ডিএনএ এ্যানালিসিস থাকতে হয়।’’ দ্যা গ্রসম্যান গ্রুপ বলে শিকাগো ভিত্তিক একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। আমি তাদের অনলাইন পোর্টাল অনুসরণ করি। সেখানে বলা আছে- ‘‘একজন নেতার দায়িত্ব হলো- কর্মীর অনুভূতিকে মূল্যায়ন করা। স্বস্তি দেওয়া ও কর্মক্ষেত্রে তার যথাযথ সম্মান দেওয়া। এর জন্য প্রয়োজন কর্মীর সাথে যথাযথ সম্পর্ক স্থাপন।’’ দ্যা গ্রসম্যান গ্রুপ এপ্রসঙ্গে আরও বলছে, ‘‘এর জন্য আপনাকে সপ্তাহ কিংবা মাসের কোন এক সময় তাদেরকে রিচার্জ করা, উজ্জীবিত করা বা মোটিভেশন দেওয়া, সেই সাথে কর্মপরিকল্পনাকে ভাগাভাগির মাধ্যমে তরান্বিত করা।’’ আম্মু, শোন, ‘‘এই উদ্দেশ্যেই হ্যালো মানডে, শিখতে চাই…।’’ কথাটা বলেই মেয়ের দিকে তাকালাম। তার চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা ও বিষ্ময় দেখতে পেলাম।
‘‘আব্বু, তোমার দ্যা গ্রসম্যান গ্রুপের পেজে এ সম্পর্কে আর কি বলেছে?’’ মেয়েটার কথায় স্বস্তি পেলাম। কেননা ওর যদি আগ্রহ না থাকে, তাহলে ভেবেছিলাম আর বলবো না। অফিস প্রধান বা যে কোন ধরনের নেতৃত্বকে যে কাজটি করার পরামর্শ দিয়েছে তা হলো: কর্মীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, কর্মীর অনুভূতিকে স্পর্শ করা, আপনি যে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তা বুঝার ব্যবস্থা করা, এমনভাবে শুনবেন ও গুরুত্ব দিবেন যেন আপনি আগে এ সম্পর্কে জানতেন না এবং আপনি শিখতে পেরে উপকৃত হলেন, সাপোর্ট করুন এবং সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করুন; অন্য কোন বিষয়কে সামনে না আনা, কর্মীর কথায় গ্যাপ থাকলে তার ইমোশনকে বোঝার চেষ্টা করুন, অঙ্গীকার করুন ও তা রক্ষা করুন, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চালু করুন, এইসব কথা লিখেছেন দ্যা গ্রসম্যান গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনিকার রীচ। তিনি যোগাযোগ কৌশল, সমস্যা সমাধানের মাইন্ডসেট এবং পরশ্রীকাতরতা নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে ‘ফরচুন-৫০০’ নামক সবচেয়ে বড় কর্পোরেট হাউসের মানব সম্পদ, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, আতিথিয়তা, এনার্জি ও উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে জড়িত। ‘‘ শোন আম্মু, এই সকল মানুষের কথা তোমাকে কেন বলছি জানো? যাতে আমরা ভাল এবং বড় বড় মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রটা জানতে পারি। আম্মু, বৃষ্টি মনে হয় কমে আসছে, একটা রিক্সা খোঁজ কর।’’ না, আব্বু, যে পথ বাকী আছে তাতে রিক্সা লাগবে না। আর একটুখানি অপেক্ষা করলে হেঁটেই যাওয়া যাবে। তোমার কথার কি কিছু বাকী আছে? শোন, শেষ কথাটা হলো- একটা মানসম্মত সাফল্যের জন্য একটা ‘মানসম্মত মাইন্ডসেট’ এর প্রয়োজন। সেটা কর্মী হোক আর সিইও হোক। আর নেতৃত্ব দিতে হয় হৃদয় দিয়ে যাকে বলে ‘লীড বাই হার্ট’। তখনো রাস্তায় ফোটায় ফোটায় বৃষ্টি ঝরছে। নিয়ন আলো সেই বৃষ্টির ফোটাকে এক অসাধারণ শৈল্পিক রূপ দিচ্ছে। (চলবে…)
মোঃ বশির আহম্মেদ
একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী।